রাজশাহীর বাগমারায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিসেবা প্রকল্পের শেড ফাউন্ডেশনের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অদক্ষ মাঠ কর্মির দ্বারা স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার নামে প্রতারণা চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে দফায় দফায় অর্থ।
ভবানীগঞ্জ পৌর সভায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গ্রামের নিরিহ মানুষকে অতিরিক্ত বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে শেড ফাউন্ডেশনে নিয়োগ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ১৫ দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দিয়েছেন মাঠ কর্মিদের।
প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শেড ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য কার্ড বিক্রয় করছেন। স্বাস্থ্য সেবার নাম করে কার্ড ফি বাবদ ৩০ টাকা, চেকআপ ফি ৮০ টাকা, বছরে সার্ভিস ফি ১২০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে চার্জ ভিন্ন ভিন্ন হবে জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিসেবা প্রকল্প, শেড ফাউন্ডেশনের নামে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় স্বাস্থ্য কর্মি ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের অশিক্ষিত মহিলাদেরকে গ্রামে গ্রামে জনসমাগম ঘটিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা লংঘন করে হতদরিদ্র গরীব মহিলাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবার নামে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ।
গনিপুর ইউনিয়নের হায়াৎপুর গ্রামের শারমিন বেগম এবং নার্গীস বেগমের বলেন, আমাদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবার নামে স্বাস্থ্য কার্ড বিক্রয় করেছে শেড ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মিরা।
অদক্ষ কর্মি দ্বারা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ইউনিয়নে যে সকল মাঠ কর্মি নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারাই মূলত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসা সেবার মধ্যে ডাইবেটিস পরীক্ষা, প্রেসার চেকআপ সহ মেয়েদের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করছে তারা। এতে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৩০ জুন) তথ্য মতে শেড এর অফিসে গিয়ে জানাগেছে ভিন্ন চিত্র।
উপজেলার ভবানীগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মোড়ে নিরাময় ডেন্টাল কেয়ার এর মালিক শাহজাহান আলী প্রাং জানান, পরিবার নিয়ে থাকবে বলে আমার বাসার তৃতীয় তলা ভাড়া নেয়। পরে বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনা দেখে সন্দেহ হয়। এদিকে বাসার মালিক সন্দেহ বসতঃ ভাড়াটিয়াকে জিজ্ঞাসা করে আপনার তো পরিবার নিয়ে থাকার কথা। কিন্তু দেখছি সব সময় বাহিরের লোকজন এরা কারা।
সে সময় ওই ভাড়াটিয়া শেড ফাউন্ডেশনের বাগমারা উপজেলা সমন্বয়কারী মমতাজ আলী বলেন, কয়েক মাস হলো এই কার্যক্রম আরম্ভ করেছি। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে এটি চালু করা হবে। এদিকে চিকিৎসার যত্রাংশ, প্রশিক্ষণ ফি এবং অন্যান্য খচর বাবদ কিছু অর্থ নেয়া হচ্ছে।
ঘটনাটি জানার পরেই বাসার মালিক শাহজাহান আলী অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করে দু’এক দিনের মধ্যেই বাসা খালি করে দেয়ার কথা বলেন। এ ব্যাপারে শেড ফাউন্ডেশনের উপজেলা সমন্বয়কারী মমতাজ আলীর সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এদিকে গনিপুুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান রঞ্জু বলেন, শেড ফাউন্ডেশনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, শেড ফাউন্ডেশন নামে কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমাকে কোন প্রকার তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করেন নি। ওই ফাউন্ডেশন ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। কোথায় কিভাবে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে সেটা খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনয়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন আছে কিনা সেটাও ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানিয়েছেন, শেড ফাউন্ডেশনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তারা কিভাবে তাদের স্বাস্থ্য সেবার মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গোপনে কিভাবে পরিচালনা করছেন সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।