ফরিদপুরের আলোচিত রুবেল-বরকতের দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অবশেষে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গ্রেফতার হলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের প্রধান নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী।
প্রসঙ্গত, দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে যুদ্ধ অপরাধী পলাতক খোকন রাজাকারের ভাগ্নে শহর আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির পরিদর্শক এসএম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে গত ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী ২০১৫ এর ৪(২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
এই মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকার অপরাধে পুলিশ শুক্রবার সকালে ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকা থেকে লেভীকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। লেভীর গ্রেফতারের খবরে ফরিদপুর শহরের সর্বত্র বঞ্চিত-লাঞ্ছিত নেতাকর্মীদের প্রাণে ভয় কাটতে শুরু করে। তারা খোঁজখবর নিতে থাকে। অবশেষে বিকেল ৫টায় বিগত দিনে নানাভাবে লাঞ্ছিত নেতাকর্মীরা ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে আনন্দ শ্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হওয়ায় আনন্দ উল্লাস করে। অসংখ্য নেতাকর্মী এসময় একে অপরের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে অপশক্তি পতনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানায়।
যেভাবে লেভী সিন্ডিকেট শহর দখল করেছিল:
রাজনৈতিক পদ পদবির নেপথ্যে অপরাধ জগতের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। বন্ধুত্বের সুবাধে সেইসব অপরাধ জগতের অনেক ব্যক্তিবর্গ কোনদিন আওয়ামী লীগের চেতনায় বিশ্বাসী নয় এমনসব জামায়াত-বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে তাদেরকে শহর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত করে। সেইসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা তার রাজনৈতিক বলয়ে অবস্থান নিয়ে কুট কৌশলের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের কারনে-অকারনে দুরে সরিয়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে তাদেরকে কুলশিত করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। কথিত রয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে লেভী-ফুয়াদ রাজনীতির সাহেব-টেক্কা। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনের পিছনে ঘুরাঘুরি করে নিজেদেরকে রাজনীতিতে প্রসিদ্ধ করে তার ¯েœহ অর্জনে। কথায় বলে চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। বিশ্বাস ঘাতকতা ইতিহাসে আমাদের বারবার অনেক কিছু শিখিয়েছে। দুই নেতাই পরবর্তীতে রাজনৈতিক গুরুর সাথে চোখ পাল্টি দিয়েছে। ফরিদপুরে গত কয়েক বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের এমন ভয় দেখানো হয়েছে কেউ দলীয় কর্মকা-ে তার পাশে যেতে সাহস পায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার অপরাধে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান বাবুলকে সন্ত্রাসী কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এমন অসংখ্য ঘটনা ফরিদপুরে আজও মনে করলে আতকে উঠতে হয়। বিশেষ হস্তক্ষেপে ফরিদপুরের শ্বাসরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসের অবশেষে নিঃশ্বাস নেবার ব্যবস্থা হয়ে ওঠে। শহরের রেডক্রিসেন্ট মার্কেটে বঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিক্ষুব্ধ এক ঘরোয়া বৈঠকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ফরিদপুরের সন্তান মোঃ ফারুক হোসেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আপাতত আমাদের নেত্রী আপনাদের নিঃশ্বাস নেবার ব্যবস্থা করেছেন। সকলের প্রতি অনুরোধ নেত্রী যে নির্দেশ দিবেন তা আমরা মেনে নিয়েই কাজ করে যাবো। তখন নেতাকর্মীরা দাবী করেন দলের মধ্যে ঢুকে পড়া জামায়াত-বিএনপি’র অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা। তিনি তখন তাদের বলেন ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করুন। আমরা অপেক্ষায় আছি। ফরিদপুর শহরে লেভী সিন্ডিকেট যদি ভাঙা না যায় যথার্থ এই লড়াই সংগ্রামের কোন মূল্য থাকবে না। শহরের টেন্ডারবাজী, হাট-বাজার থেকে চাঁদাবাজী, জমি ক্রয়ের কমিশন, সালিশ বিচারের মাধ্যমে অর্থ আয়, মাদক ব্যবসায়ীদের দেখভাল করার সুবাদে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ এবং তাদের বিশাল অর্থের নামে-বেনামের সম্পদ ক্রোকের অনুরোধ জানিয়েছে ফরিদপুরবাসী। ফরিদপুরে লেভী গ্রুপকে অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এমন কয়েকজন রাঘোব-বোয়াল রয়েছে তাদেরকে দ্রুত সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবী উঠেছে।