• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ই জুন, ২০২৩ ইং
Mujib Borsho
Mujib Borsho
প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ার বাজার

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ার বাজার

 

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যদিও দেশের শেয়ার বাজারে বিগত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তবে করোনার প্রভাবে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ফলে সূচক ও লেনদেন ৭ বছর আগের অবস্থানে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে কমেছে বাজার মূলধন ও বিও হিসাবের সংখ‌্যা।

তবে করোনার প্রভাবে শেয়ার বাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেওয়া পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা। দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেই বাজার আবারও চাঙা হবে- এমনটাই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।

তবে দেশে করোনার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাধারণ ছুটি মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। ফলে কবে নাগাদ শেয়ার বাজারে লেনদেন চালু হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে করোনার প্রভাব স্বাভাবিক হবে কি-না, সে আতঙ্ক ভাবিয়ে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। আর লেনদেন চালু হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, শেয়ার বাজারে করোনার প্রভাব পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন ও বিনিয়োগের সুযোগ রেখে ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী বেশ কয়েকটি ব্যাংক শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করে। তবে সে বিনিয়োগের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে না পড়তেই শেয়ার বাজারে আঘাত হানে করোনা। এতে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। ফলে আরো পতনমুখী হয় দেশের শেয়ার বাজার।

তবে গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করোনা আতঙ্কে শেয়ার বাজারে পতন ঠেকাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার ও ইউনিট দরের সার্কিট ব্রেকারের ফ্লোর প্রাইসের (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এ ইতিবাচক সিদ্ধান্তে গত ২২ থেকে ২৫ মার্চ এ ৪ কার্যদিবসে শেয়ার বাজারে কিছুটা উত্থান দেখা মেলে। মূলত ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের ফলে বড় পতন থেকে শেয়ার বাজার রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার শেষ কার্যদিবস (২৫ মার্চ) পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংক ও তাদের ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মাধ্যমে বাজারে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। ওই সময়ে ব্যাংকগুলো প্রায় ১৭ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে। আর একই সময়ে বিক্রি করেছে ৫ কোটি টাকার শেয়ার। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ৪ ব্যাংকের নিট বিনিয়োগ ২ কোটি টাকা। আর বাদ বাকি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ১০ কোটি টাকা।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত দুই মাসের শেয়ার বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪৪৮১.৫১ পয়েন্টে। আর সর্বশেষ ২৫ মার্চ সূচকটি কমে অবস্থান করছে ৪০০৮.২৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৪৭৩.২৩ পয়েন্ট। তবে ১৬ মার্চ ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৯৬ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৭৭২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা সাত বছরের মধ্যে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ মে ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৩ হাজার ৭৫৭ পয়েন্টে।

এদিকে ২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর ২৫ মার্চ তা কমে লেনদেন হয়েছে ৩৪৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ১১৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের খবরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে ১ হাজার ২১ কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়। তবে তারপর থেকে ক্রমেই তা কমতে থাকে। আর ২৪ মার্চ ডিএসইতে করোনার প্রভাবে লেনদেন হয় ১৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৪৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৯ মার্চ করোনার প্রভাবে লেনদেনের সময় কমিয়ে আনা সংক্রান্ত জটিলতায় মাত্র আধাঘণ্টা লেনদেন হয়। ওই সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হয় মাত্র ৪৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর ২৫ মার্চ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ২৩৫ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ২৯ হাজার ৮৪ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) গত দুই মাসের শেয়ার বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি সিএসই’র প্রধান সূচক সিএসইএক্স ছিল ৮২৭৭.৪৮ পয়েন্টে। আর ২৫ মার্চ সূচকটি কমে অবস্থান করছে ৬৮৫৯.৯০ পয়েন্টে। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দুই মাসের ব্যবধানে সিএসইএক্স সূচক কমেছে ১৪১৭.৫৮ পয়েন্ট।

আর ২ ফেব্রুয়ারি সিএসই’র বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২৫ মার্চ তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭১ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দুই মাসের ব্যবধানে সিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ২৮৬ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

তবে আলোচ্য সময়ের মধ্যে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।

এদিকে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে মন্দা শেয়ার বাজার থেকে বেড়িয়ে যেতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ২ ফেব্রুয়ারি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৩টি। আর ২৫ মার্চ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৭টিতে। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে বিও হিসাব বন্ধ হয়েছে ১৭৬টি।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ রাইজিং বিডিকে বলেন, ‘শেয়ার বাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে শেয়ার ও ইউনিট দরের সার্কিট ব্রেকারে ফ্লোর প্রাইসের যে সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা ইতিবাচক। তবে এ সিদ্ধান্ত আরো আগে নিলে বাজারে পতন কম হতো।’

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেয়ার বাজারে গতি ফেরার বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন‐উর‐রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনার প্রভাবে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে, প্রধানমন্ত্রী সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। সম্প্রতি করোনার প্রভাবে শেয়ার বাজারে যে পতনের ধারা অব্যাহত ছিল, সার্কিট ব্রেকারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণেই। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি শেয়ার বাজার নিয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনায় শেয়ার বাজারে গতি ফিরে আসবে।’

শেয়ার বাজার পুনরায় গতি ফিরে পাবে এমন প্রত্যাশায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের পতন রোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিএসইসি শেয়ার ও ইউনিট দরের সার্কিট ব্রেকারের ফ্লোর প্রাইসের যে সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে তা যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ কম হলেও শেয়ার দর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকেছে না। আশা করা যায় লেনদেন চালুর পর ব্যাংকগুলোসহ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলে শেয়ার বাজার গতি ফিরে পাবে। তবে সারা দেশে করোনার প্রভাব স্বাভাবিক হয়ে কবে নাগাদ লেনদেন চালু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। এ বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বেশ আতঙ্কে রয়েছেন।’

সংবাদসুত্রঃরাইজিংবিডি

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুন ২০২৩
শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
« মে  
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।