থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী পুরুষেরই চুলকানি হয়, যা চর্ম রোগ নামে পরিচিত। এসব চর্মরোগের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত যে রোগটি সেটি হলো অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, যা একজিমা নামে বহুল পরিচিত। একজিমা কী, কেন হয় এবং এতে করণীয় কি এ সম্পর্কে ধারনা থাকা প্রয়োজন।
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা ত্বকের এক ধরণের প্রদাহ। এর ফলে ত্বক প্রচুর চুলকায়, লালচে হয়ে ফুলে উঠে, ত্বকে ফাটল দেখা দেয় এবং চুলকানোর ফলে আক্রান্ত স্থানগুলো থেকে কখনও কখনও পানির মত কিছুটা গাঢ় পরিষ্কার তরল পদার্থ বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে সেখানে কালো স্পট পড়তে দেখা যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে পুরো শরীরেই চুলকানি থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাঁটুর পিছনের অংশ, কনুইয়ের সামনের অংশগুলি বেশি আক্রান্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের হাত ও পা বেশি আক্রান্ত হয়। এছাড়া শরীরের অন্যস্থানও আক্রান্ত হতে পারে।
একজিমার প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। তবে গবেষণায় জানা যায়, জেনেটিক বা বংশগত কারণ ও ইমিউন সিস্টেমের ত্রুটিপূর্ণ কাজ অন্যতম। যাদের বংশে বা পরিবারে একজিমা, হাঁপানি, হে ফিভার থাকে তাদের এ সমস্যা বেশি হয়। এমন ব্যক্তিদের বলা হয় অ্যাটোপিক ব্যক্তি।তাদের বিভিন্ন পরিবেশে, এলার্জেন, ধুলোবালি, শুস্ক আবহাওয়া ও বিশেষ কিছু খাবারের কারণে এই রোগের প্রকটতা বেড়ে যায়।
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস রোগে মূলত রোগের লক্ষণ দেখে ডাক্তাররা তা নির্ণয় করে থাকেন। এর জন্য তেমন কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। যেহেতু রোগের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা, সেহেতু এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই যার দ্বারা রোগটি নিরাময় করা যায়। এটিকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ বলা হয়। চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রকটতা নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়।
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসা মূলত এন্টিহিস্টামিন ও টপিক্যাল স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রোগের লক্ষণ, প্রকটতা ও ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য ডাক্তররা প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ও মুখে স্টেরয়েড দিয়ে থাকেন। এছাড়া ভিটামিন-ডি ও প্রোবাওটিকের ভূমিকা রয়েছে বলে গবেষণায় জানা যায়।
অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা হতে ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা। যেমন যেসব পরিবেশে বা খাবারের কারণে চুলকানি হয় তা পরিহার করা। ধুলোবালি, রোদ, সিগারেটের ধোঁয়া এড়িয়ে চলা। সুঁতি কাপড় পরিধান করা। সাবান, স্যাভলন বা ডেটল পরিহার করা বা কম ব্যবহার করা বা কম ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার করা বা সাবানের পরিবর্তে শরীরে শ্যাম্পু ব্যবহার করা। খুব অল্প সময়ে গোসল করা, ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে গোসল না করা। গোসলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা। সবসময় শরীরে লোশন, তেল বা ভ্যাজলিনের মত পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করে দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখা। তাই অ্যাকজিমা আক্রান্ত রোগিরা একটু সচেতন হলে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি জীবন-যাপন করলে ভালো হয়।