• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
পরিবেশ দূষণরোধে ভূমিকা রাখবে ঢাকার খাল

ঢাকা, ২ জুন, ২০২১ বুধবার 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ঢাকা ছিল এক সময় মোঘলদের কাছে আকর্ষণীয় শহর। প্রাকৃতিক সুবিধাই মুঘলদের ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে আকর্ষণ করে। এখনকার ঢাকা শহর দেখে বোঝার উপায় নেই যে, মাত্র একশ বছর আগেই ঢাকার ভৌগোলিক পরিবেশ কতটা মনোরম আর স্বাস্থ্যকর ছিল। দুনিয়ায় এমন রাজধানী খুব কমই আছে যার চারপাশে বৃত্তাকারে বেষ্টিত করে রেখেছে অনেকগুলো বড় নদী। ইতালীর ভেনিস নগরীর সাথে একে অনেকেই তুলনা করতো। চারপাশে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, টঙ্গী ও তুরাগের মতো পাঁচটি নদী আর ভেতর দিয়ে শতাধিক খালের প্রবাহ আর উপকণ্ঠজুড়ে বিস্তীর্ণ বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল নিয়ে একসময় ঢাকা প্রাকৃতিকভাবেই ছিল জলাবদ্ধতাবিহীন পরিবেশ বান্ধবনগরী।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অভিমত জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপই ঢাকা শহরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে। এই শহরের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে সেটি বজায় থাকলে শহরের পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণের হার আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে। আর বর্তমানের মতো পরিবেশ দূষণ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ঢাকা শহর হতে পারে বসবাস অনুপোযোগী শহর। বলা হয়ে থাকে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর যে বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে তার মধ্যে পুষ্টির পরেই পরিবেশের অবস্থান। ঢাকার পরিবেশদূষণ কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটি তুলে ধরেছে বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে বেশির ভাগ সময় ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর।

দেশের বায়ুদূষণের অবস্থা একদিকে দিন দিন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুদূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। বায়ুদূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। এই দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তবে সবার আগে বায়ুদূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে দেখতে হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটি সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু বায়ু নয় ঢাকা শহরের পরিবেশ নিয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। এ সংকটের অনেক কারনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জলাশয় কমে যাওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। গাছপালা কমে যাওয়া বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবও ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। গাছপালা মানুষের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছড়িয়ে দেয় পরিবেশে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে জলাশয়ের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। এটা পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। ভূখণ্ডের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলে। ভূখন্ডের উপরের জলাশয় কমে যাওয়ায় দিন দিন মাটির গভীরের পানির স্তরও ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে আরো নিচে। নগরবিদরা বরাবরই বলে আসছেন ঢাকার ভারসাম্যহীন পরিবেশের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ন। বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা এমনকি আবাসিক এলাকা, কোনোটাতেই নেই সঠিক ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার ছাপ।

পরিবেশ দূষণের কারনে সকলের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায় বিশেষজ্ঞগণের মতে দূষণের মাত্রা এতোই বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে এই শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত বাসযোগ্য একটি সুস্থ, সুন্দর, টেকসই ও পরিবেশসম্মত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনের জন্য সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কার্যকরভাবে মোকাবেলায় বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের রয়েছে অনেক আইন ও বিধি । এর মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও কর্মকৌশল-২০০৯, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন-২০১০, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

লেখক :-মোঃ কামাল হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা, খাদ্য মন্ত্রণালয়

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।