ঢাকার কাফরুল থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়ের করা মামলায় ফরিদপুরের এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে শহরের পূর্ব খাবাসপুর লঞ্চঘাট এলাকাস্থ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ওই যুবলীগ নেতার নাম আসিবুর রহমান ফারহান (৪০)। তিনি শহরের পূর্ব খাবাসপুর লঞ্চঘাট এলাকার শওকত মো. কামালের ছেলে।
আসিবুর শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ফারহান শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাইন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এই দুই বন্ধুর মধ্যে ফারহান ছিলেন খন্দকার মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবরের অনুসারী।
২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ফরিদপুরে সোনালী ব্যাংকের কাছে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মারা যান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক সেবিকা। এ ঘটনার সাথে আসিবুরের ক্যাডার বাহিনী জড়িত এ বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি আত্মগোপন করেন।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, আসিবুরকে ঢাকার কাফরুল থানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়ের করা মামলায় সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাকে বিকেলে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরে তাকে ফরিদপুর জেলখানা থেকে নিজেদের জিম্মায় নেবে সিআইডি ঢাকা।
সিআইডির চাহিদা অনুযায়ী ফরিদপুরের পুলিশ গত শুক্রবার দুপুর পৌনে ১টা থেকে শনিবার দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত আসিবসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
অপর দুইজন হলেন- ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভি (৬১) এবং জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন (৫৪)।
প্রসঙ্গত, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে গত ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ এনে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মানি লন্ডারিং মামলায় ওই দুই ভায়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী ২০১৫ এর ৪(২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
সিআইডি এ মামলায় দুই ভায়ের ১০দিনের রিমান্ড চান। গত ১৩ জুলাই ভার্চুয়াল র্কোটের মাধ্যমে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সময় ফরিদপুর কারাগারে থাকা অবস্থায় জেল গেটে জুম অ্যাপসের মাধ্যমে এ শুনানিতে অংশ নেন সাজ্জাদ ও ইমতিয়াজ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৯ জুলাই ভোরে সিআইডি দুই ভাইকে ফরিদপুর জেলখানা থেকে তাদের জিম্মায় নেন। তাদের সারাসরি ঢাকার মালিবাগস্থ সিআইডির কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
দুইদিন রিমান্ড শেষে সিআইডি গত ২১ জুলাই পুণরায় ১০দিন করে রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৪ জুলাই মোট পাঁচ দিন রিমান্ড শেষ হওয়ার পর রুবেল ও বরকতকে মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নাজমুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন ও আসিবুর রহমানকে মানি লন্ডারিং মামলায় সিআইডি পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে রাতে ফরিদপুর জেলা আ্ওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সুবল সাহার বাড়ি শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লা বাড়ি সড়কে অবস্থিত।
এ ঘটনায় গত ১৮ মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
গত ৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাজ্জাদ, ইমতিয়াজসহ মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় বর্তমানে মোট ১৬জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।