বরগুনার পাথরঘাটায় শ্বশুরের কাছে পাওনা টাকা চাইতে এসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। তাকে শারীরিক নির্যাতন করে ১৬ দিন ঘরে শিকলবন্দি করে রেখেছেন শ্বশুর বাড়ির লোকজনে। পাথরঘাটা পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ডে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আঃ হক মাস্টারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতিত শফিকুল ইসলাম বরগুনা সদর উপজেলার ১০নং নলটোনা ইউনিয়নের শিয়ালিয়া গ্রামের আ. ছত্তার ফকিরের ছেলে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে নির্যাতিত শফিকুল ইসলাম শ্বশুরের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকা তিতুমির কলেজ থেকে রসায়নে মাস্টার্স পাস করে টেক্সটাইলের ওপর পিএইচডি করেন। লেখাপড়া শেষ করে নিজের ব্যবসা হিসাবে বাংলাদেশ টেক্সফাইট বাইংহাউজ লিমিটেডের যাত্রা শুরু করেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে তিনি ওই কম্পানি পরিচালক পদে বসান। এরপর ব্যবসা থেকে জেসমিন আক্তার তার বাবাকে বিভিন্ন সময় বাড়ি নির্মাণ ও ব্যাবসায় অর্থ যোগান, দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানোসহ বিভিন্ন কাজে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন। পরে করোনাভাইরাসে দেশ অচল হয়ে যাওয়ায় শফিকুলের ব্যবসায় ধ্বস নামে। এরপর শফিকুলের শ্বশুরকে টাকা ধার দেওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় স্বামীর সঙ্গে রাগ করে স্ত্রী জেসমিন আক্তার ব্যবসার সকল টাকা/পয়সা নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে আসেন। পরে গত ১৪ জুলাই শফিকুল পাথরঘাটায় তার শ্বশুর বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিতে আসলে ধারের টাকা নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গেও বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় শফিকুল আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা জানালে শ্বশুর আবদুল হক, শ্যালক রুমান হোসেন ও স্ত্রী জেসমিন আক্তার তাকে মারধর করে টানা ১৬ দিন শিকল দিয়ে ঘরে বেঁধে রেখেছেন।
শফিকুল বলেন, শনিবার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কোরবানির পশু জবাই করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আমি শিকলসহ ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে ইউএনওর বাসায় গিয়ে তার কাছে বিষয়টি বলেছি। পরে ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুবকর সিদ্দিক মিল্লাত এসে আমার পায়ে লাগানো শিকল খুলে দিয়েছে।
শফিকুল ইসলামের শ্বশুর আবদুল হক মাস্টার বলেন, জামাই শফিকুল আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। সে অসুস্থ, এ কারণে তাকে শিকল পড়ানো হয়েছে। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। জামাই কিছু টাকা পাবে, তা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
এ বিষয় পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, তিনি ঈদের দিন দুপুরে তার বাসায় মেহমান নিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় শিকল পড়া অবস্থায় এক লোক এসে তার কাছে নির্যাতনের মৌখিক নালিশ জানিয়েছেন। শফিকুল আইনের আশ্রয় নিলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।