• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ, নতুন করে লকডাউনে যাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া?

চীনের সীমানা ছাড়িয়ে নভেল করোনাভাইরাস যখন পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন সবার আগে আক্রান্ত হয় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা, প্রকাশ্য চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ কিংবা লকডাউন—নানা উপায়ে সাধারণ মানুষকে ঘরে রেখে সংক্রমণ ঠেকাতে সফল হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। তবে এ সফলতা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঁচ লেগেছে এসব দেশে। কাজের প্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে আসায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় নতুন করে কার্যকর লকডাউন আরোপের প্রশ্ন সামনে এসেছে। খবর রয়টার্স ও সিএনবিসি।

করোনার সূতিকাগার চীন। দেশটির উহান শহর থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। টানা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউনে থাকার পর এপ্রিলের শুরুতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে চীনের নাগরিকরা। ওই সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণে লাগাম টানা সম্ভব হয়েছিল। তবে চার মাসের কম সময়ের মাথায় পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটেছে। রোববার দেশটিতে একদিনে ৫৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের সবাই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে। মার্চের পর চীনে একদিনে নতুন শনাক্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। রোগী বাড়ছে পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে। পাঁচদিন ধরে উত্তরের লিয়াওনিং প্রদেশে প্রতিদিন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মে মাসের পর দেশটির জিলিন প্রদেশে নতুন করে দুজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির প্রশাসনকে।

নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনসমাগমে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হংকং। অথচ বছরের শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ অবস্থার মধ্যেও হংকংয়ে রেস্টুরেন্ট খোলা ছিল।

কয়েক সপ্তাহ ধরে জাপানের রাজধানী টোকিও ও এর আশপাশের জনবহুল এলাকাগুলোয় নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করে দেশটির অর্থমন্ত্রী ইয়াশুতোশি নিশিমুরা বলেন, আমরা ফের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারি না। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে সংক্রমণ এড়াতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা ও ঘরে বসে অফিস করার সুযোগ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

অবস্থার অবনতি ঘটেছে ভিয়েতনামেও। গত এপ্রিল থেকে দেশটিতে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে এসে ভিয়েতনামের উপকূলীয় শহর দানাংয়ে ছয়জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪২০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ ঘটেছে উল্লেখ করে সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে পর্যটন শহর দানাংয়ে। শহরটি থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৮০ হাজার পর্যটককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ফিলিপাইনে গত ১ জুন থেকে লকডাউন শিথিল হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। লকডাউন শিথিলের পর গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে নতুন করে ৬২ হাজার ৩২৬ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের প্রতি নতুন করে লকডাউন আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন ম্যানিলার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গত মাসে লকডাউন শিথিলের পর মালয়েশিয়ায় কয়েকটি এলাকাকে করোনার ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়ে নতুন করে কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে দেশটিতে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই তালিকায়ই সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে করোনা শনাক্তের সর্বমোট সংখ্যা ১ লাখ পেরিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, সীমান্ত শহর কায়সংয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরে আসা এক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ তথ্য সঠিক হলে দেশটির সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা করোনা সংক্রমণের প্রথম ঘটনা হবে এটি। অন্যদিকে গত শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনে নতুন শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৩। ৩১ মার্চের পর এটাই দেশটিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্তের রেকর্ড।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে ছয় সপ্তাহের লকডাউন জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। দেশটির ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার মিখায়েল কিড বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখনই প্রতিরোধমূলক কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনগুলোয় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

ইউরোপের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া—এ চারটি দেশ এখন করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এর বাইরে চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা দিন দিন জোরদার হচ্ছে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনামের নির্দিষ্ট এলাকায় লকডাউন আরোপ হয়েছে। ফিলিপাইনে কঠোর লকডাউনের চিন্তভাবনা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় এ অঞ্চলের দেশগুলো নতুন করে বড় পরিসরে লকডাউনের পথে হাঁটে, নাকি অন্য কোনো কার্যকর উপায়ে সংক্রমণ রুখতে উদ্যোগী হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।