• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
বিশ্বজুড়ে স্বস্তি, অনুমোদন পেল ফাইজারের টিকা

ছবি প্রতিকী

ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের টিকার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যই প্রথম এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিল। দেশটিতে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের দেহে আগামী সপ্তাহ থেকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের টিকা অনুমোদন পাওয়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মহামারি অবসানের আশা সঞ্চার করছে বিশ্বব্যাপী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যেখানে একটা ভ্যাকসিন আসতে সাত-আট বছর সময় লেগে যায়, সেখানে ফাইজারের করোনা ভ্যাকসিন খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদন পাওয়ার সফলতা দেখিয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। বিশ্ববাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রযুক্তির বিজয় হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিনের বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ভ্যাকসিন আসতে থাকুক। তবে আমরা যত দিন না পাব, তত দিন সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’ সরকারের রাগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি সত্যিই সুখবর। মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববাসীকে নিরাপদ রাখতে অনেক ভ্যাকসিনের প্রয়োজন। আরো অনেক কোম্পানি করোনার ভ্যাকসিন বাজারজাত করলে বিশ্বের সব মানুষ তা পাবে। তাই শুধু একটি কোম্পানি নয়, আরো কোম্পানিকে এগিয়ে আসতে হবে।

যুক্তরাজ্য সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (এমএইচআরএ) অনুমোদন সংবলিত সুপারিশ সরকার আজ (বুধবার) গ্রহণ করেছে। টিকা আগামী সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্য জুড়ে পাওয়া যাবে।’ আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককও। তিনি বলেন, খুবই চমত্কার সংবাদ। টিকার অনুমোদন নিয়ে এমনটাই বলেন তিনি।

গত মাসের মাঝামাঝি ফাইজার ও বায়োএনটেক জানায়, তাদের ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। সেই সঙ্গে এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। কয়েক দিন পর গত ১৮ নভেম্বর ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার তারা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা ৯৫ শতাংশ বলে দাবি করে। যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ বলছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনটি নিরাপদ।

উল্লেখ্য, সাধারণত ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পর পরীক্ষা করতেই লেগে যায় বছরের পর বছর। সেখানে মাত্র ১০ মাসেই এই সাফল্য পেয়েছে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি। এটিই এখন পর্যন্ত তত্ত্ব থেকে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তব রূপ ভ্যাকসিন। ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ৪ কোটি ডোজের আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছিল যুক্তরাজ্য, যা তারা ২ কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে দিতে পারবে। চলতি মাসেই তারা ১ কোটি ডোজ পাবে বলে আশা করছে।

এক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি ৯৪ শতাংশ কার্যকর। এই পরীক্ষায় সম্পৃক্ত করা হয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৪১ হাজার মানুষকে। তাদের অর্ধেকের মধ্যে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় আর বাকি অর্ধেককে দেওয়া হয় ‘ছায়া ভ্যাকসিন’ (রোগীরা এটিকে ভ্যাকসিন বিবেচনা করলেও আসলে সেটি ক্ষতিকর নয় এমন পদার্থ)। ফাইজার ছাড়াও ইতিমধ্যে আরেক মার্কিন কোম্পানি মর্ডানা জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার উদ্ভাবিত স্পুটনিক নামের ভ্যাকসিনটিও ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে অনুমোদন পাওয়ায় ফাইজারের এই টিকা এখন যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহারে আর কোনো বাধা থাকল না। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী সাইমন স্টিভেন্স জানিয়েছেন, তারা এখন তাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কেয়ার হোমের বাসিন্দা ও স্টাফ, ৮০ বছরের বেশি বয়সি নারী-পুরুষ, অন্যান্য স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবাকর্মীসহ তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রত্যেককে ২১ দিনের ব্যবধানে টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হবে। সারা বিশ্বে বেশ কিছু টিকা তৈরির কাজ চলছে। তার মধ্যে কয়েকটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে এই প্রথম এই ফাইজারের টিকাটির এরকম সাফল্যের কথা জানা গেল। এই টিকার ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ভাইরাসটির জেনেটিক কোড শরীরে ইনজেক্ট করা হয়। আগের পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, টিকা দেওয়ার ফলে শরীরে এন্টিবডি এবং রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার আরো একটি অংশ, যা টি শেল নামে পরিচিত, সেটিও তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্কে এই টিকার পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সাত দিন পর ভাইরাসটি প্রতিরোধে মানবদেহে ৯০ শতাংশ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও সবাইকে এখনো সতর্ক থাকতে হবে এবং করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি রুখতে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং উপসর্গ দেখা দিলে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার মতো নির্দেশনা মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে উপসর্গ দেখা গিলেই পরীক্ষা করাতে হবে এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।