নিঃস্ব হচ্ছে সাধারন পরিবার
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ-
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে, গ্রাম গঞ্জের রাস্তা ঘাটের
আশপাশের দোকানপাটে ও বাড়ী বাড়ী ঘুরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সুদ কারবারীরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা জুড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ দাদন ব্যবসা। উপজেলার সুদ কারবারীদের মধ্যে কেউ শতকরা মাসিক ১০ টাকা হারে আবার কেউ বড় অংকধারী গ্রাহকের কাছ থেকে মাসিক শতকরা টাকা হারে সুদ আদায় করে চলেছেন। গ্রাহকরা সময়মত সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলেই হুমকী ধুমকী সহ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নেওয়া ব্যাংকের খোলা চেকে ইচ্ছেমত অংক বসানোর পর মামলা দিয়ে মোটা অংক আদায় করে চলেছে সুদ কারবারীরা। এভাবে সুদ কারবারীর জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে উপজেলার বহু পরিবার। এছাড়া সম্প্রতী উপজেলার কিছু কিছু দাদনখোর তাদের ব্যবসার কায়দা কৌশল পরিবর্তন করে সমবায় সমিতির নামে সুদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা জানান, “সম্প্রতী
উপজেলায় সুদ কারবারীদের দৈৗরাত্ন বেড়ে চলেছে। মানি লন্ডারিং লাইসেন্সবিহীন এসব
সুদ ব্যবাসা বন্ধ করার জন্য গত সোমবার উপজেলা জুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। এরপরও অবৈধ সুদ ব্যবসা বন্ধ না হলে সুনিদির্ষ্ট অভিযোগের ভিক্তিতে দাদনখোরদের বিরুদ্ধে
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে”।
জানা যায়, উপজেলার মধ্যে গাজীরটেক ইউনিয়নে সুদ কারবারীদের দৌরাত্ন বেশী।
উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী জানান, “ এলাকায় শত শত সুদ কারবারী রয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকেই শতকরা মাসিক ১০ টাকা হারে সুদ নিচ্ছে। এতো চড়া সুদের পাকে পড়ে অনেক পরিবারই নিঃস্ব হচ্ছে”। ভুক্তভোগী সূত্রগুলো জানায়, উক্ত ইউনিয়নের কানাইরটেক
গ্রামের শেখ নুরুদ্দিন (৪৫), ছব্দার মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের মোঃ হায়দার আলী (৫০),
চরসুলতানপুর গ্রামের শাহীনূর বেগম (৪৮) ও ছাহের মোল্যার বাজার এলাকার ইয়াকুব শেখ (৫০) সহ এলাকার অনেকেই গোপনে প্রকাশ্যে অভেদ সুদ কারবার করে চলেছেন।
এছাড়া উপজেলা সদরে সুদ কারবারীদের মধ্যে সালমা আক্তার ওরফে খুশি আপা (৪০), জহুরুল (৫৪) ও কামাল হোসেন (৪০) সহ চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আমজাদ বেপারী (৫২), ছাত্তার বেপারী
(৪৫) অনেকেই রমরমা সুদ ব্যবসা করে চলেছেন। এদের মধ্যে মঙ্গলবার সালমা আক্তার ওরফে খুশি আপা (৪০) জানান, “ আগে আমি সুদে টাকা লাগাইতাম সত্য, কিন্ত বর্তমানে আমি
‘বিশ্বাস সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিঃ’ একটি সমিতি খুলেছি। এ সমিতির
নামে চরভদ্রাসন বাজারে একটি দ্বিতল ভবনের কক্ষে অফিস নিয়েছি। এ অফিস থেকে আমরা বিভিন্ন জনকে ঋন দিয়ে থাকি এবং বিতরনকৃত ঋণের টাকা দৈনিক কিস্তির
মাধ্যমে কিছু সুদসহ আদায় করে থাকি”।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমবায় অফিসার আনিছা খাতুন জানান, “সমিতির সঞ্চয়কৃত টাকা কোনো কোনো সদ্যস্যর উপকারার্থে ঋণদান বিধান রয়েছে। কিন্ত কোনো ব্যাক্তি ফান্ডের লাখ লাখ বা কোটি টাকা সমিতির নাম করে ঋণ দেওয়ার পর সেই ঋণের টাকা সরকারি নীতিমালার বাইরে চড়া সুদসহ দৈনিক কিস্তির মাধ্যমে আদায় করা বৈধ নয়”। সূত্র জানায়, উপজেলা জুড়ে প্রায় ৪৮টি সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে।
এছাড়া রেজিষ্ট্রেশনবিহীন আনাচে কানাচে ব্যঁাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বহু সমবায় সমিতি। এদের মধ্যে বেশীরভাগ সমিতির নাম করে এলাকায় চড়া সুদ ব্যবসা করে চলেছে। কিন্ত উপজেলায় উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতির পরিমান খুব কম। তাই চাক্রবৃদ্ধি চড়া সুদকারবারীদের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।
সুদ কারবারীর খপ্পড়ে এক ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম জানায়, পারিবারিক বিপদে পড়ে উপজেলার এক সুদ কারবারীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দাদন এনে আরো ৩ লাখ টাকা সুদ টেনেছি। এরপরও উক্ত সুদ কারবারী অনেক বড় অংক সুদের টাকা দাবী করেছিল। কিন্ত প্রশাসনের একটু সহায়তা নিয়ে অনেক আকুতী মিনহতী করে আসল ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি এবং উক্ত সুদ টানতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি”। একই দিন আরেক ভুক্তভোগী শাহনাজ পারভীন চরভদ্রাসন প্রেস ক্লাবে এসে অভিযোগ করেন,“ প্রায় ৩ বছর আগে বিপদে পড়ে এলাকার খবিরুল ইসলাম (৫০) নামক এক সুদকারবারীর কাছ থেকে ২ লাখা টাকা দাদন এনে ৪ লাখ টাকা সুদি পরিশোধ করেছি। বর্তমানে উক্ত সুদ কারবারী আরও ৬ লাখ টাকা দাবী
করছে। ভুক্তভোগী গৃহিনী ক্রন্দন করে আরও বলেন, তার স্বামী একটি মাদ্রাসার শিক্ষক, অল্প টাকা বেতন পায়, চার সন্তানের সংসার, ভাই আমার পরিবারটি বাঁচান”।