রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককে শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। ওই শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, চাকরির অবসায়নের মাধ্যমে পাটকল শ্রমিকরা গড়ে ১৩.৮৬ লাখ টাকা পাবেন। কারও কারও ক্ষেত্রে তা ৫৪ লাখ টাকাও হবে।
তার আগে সকালে গণভবনে মুখ্য সচিব, অর্থ সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারপ্রধান।
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারীর চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত গত রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সেদিন বলেন, শ্রমিকদের অবসায়নের পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় আধুনিকায়ন করে এসব পাটকলকে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ৮ হাজার ৯৫৪ জন পাটকল শ্রমিক অবসরে গেছেন, তাদের সব পাওনাও একসঙ্গে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন পাটমন্ত্রী।
তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এর বিরোধিতায় মিছিল-সমাবেশের মত কর্মসূচি চালিয়ে আসছে গত কয়েক দিন ধরে।
বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা যেখানে বাড়ছে, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন হলে শ্রমিক ছাঁটাই নয়, বরং নতুন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে যুক্তি দিয়ে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বৃহস্পতিবার বলেন, এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।
২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধা দেয়া হবে। এজন্য তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেজন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
পাওনা পরিশোধ কীভাবে
মুখ্য সচিব জানান, পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওয়া বুঝিয়ে দিতে সরকার কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই লাখ টাকার কম যাদের পাওনা হবে, তাদের পুরো টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেওয়া হবে।
আহমদ কায়কাউস দুই লাখের বেশি পাওনা হলে ৫০ শতাংশ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ দেওয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ টাকা তাদের দেওয়া হবে তিন মাস মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের আকারে। অর্থাৎ, এই সঞ্চয়পত্র থেকে তিনি ইন্টারেস্ট পাবেন। আমরা একটা হিসেব করে দেখেছি, যদি গড়ে ১১ শতাংশ হারে মুনাফা দেওয়া হয়, তাহলে তিন মাসে গড়ে ১৯ হাজার ৩২০ টাকা থেকে ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পেতে পারেন তারা।
তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে একজন শ্রমিক যা এখন নগদে পেত তার চেয়ে বেশি পাবে যদি আমি মাসিক মুনাফাটা হিসাব করি। নিম্নআয়ের শ্রমিক ভাইবোনদের জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এটি করেছেন। আজ যখন প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত দিলেন, তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। সংবাদসুত্র: দৈনিক যুুগান্তর।।