• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠিত হয়

ছবি সংগৃহিত

৩ ডিসেম্বর আজ। একাত্তরের এই দিনে গঠিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত অধ্যায়। মুক্তিবাহিনী এদিন গেরিলা আক্রমণ থেকে সরে এসে ভারতীয় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে এক সারিতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়। মনোবল বাড়তে থাকে বাংলার দামাল ছেলেদের। অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনী আকস্মিক ভারতের আগরতলা, অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তিপুর, উত্তরলাই, যোধপুর, আম্বালা ও আগ্রা বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। বিকালে কলকাতা প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশাল এক জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভাষণদানকালে এ খবর পান। দিল্লি ফিরে তিনি রাতেই আকাশবাণী দিল্লি বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশের যুদ্ধ নিয়ে ভাষণ দেন।

ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের আগেই রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। ভারতীয় পূর্বাঞ্চল কমান্ডের লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মিত্রবাহিনী নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিমান হামলা শুরু করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী রাতেই বাংলাদেশের সব মুক্ত এলাকায় অবস্থান নেয়। সব রুট দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের সব বিমান ঘাঁটি অচল করে দেয়। কুর্মিটোলা এয়ারপোর্টে ৫০ টন বোমা ফেলা হয়। এতে অন্তত ১২টি বিমান বিধ্বস্ত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এদিন কুমিল্লায় মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়ে মিয়াবাজার দখল করে নেয়। আখাউড়ার আজমপুর স্টেশনে দুপক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে যায়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। নোয়াখালীতে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সোনাইমুড়ী মুক্ত করে। এরপর তারা চৌমুহনীতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সফল হামলায় নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে দুটি ফুয়েল পাম্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাত ৯টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুজন চৌকস অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম ও ক্যাপ্টেন আকরাম দুজন গানারসহ বিমান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল জ্বালানি সংরক্ষণাগারে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করে তা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেন।
এ ছাড়া ঘন কুয়াশার মধ্যে উড্ডয়ন বিপজ্জনক হলেও দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বদরুল আলম আরেকটি যুদ্ধবিমান নিয়ে চট্টগ্রামের জ্বালানি সংরক্ষণাগার উপর্যুপরি বোমা মেরে ধ্বংস করে দেন। এই দুই স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলে মনোবলে চিড় ধরে পাকিস্তানি দখলদারদের। নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে ধাবিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের সহযোগিতা বাড়তে থাকে। ভারতের মিত্রবাহিনী আর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলিত প্রতিরোধের মুখে একে একে পরাস্ত হতে থাকে হানাদাররা। অসম সাহসী ও অকুতোভয় মুক্তিবাহিনীর মনোবল আর প্রতিজ্ঞা বিজয় অর্জনের পথে সব বাধা অতিক্রম করে এগোতে থাকে দুুর্দমনীয় গতিতে। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় যুদ্ধে লিপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঝুলিতে জমতে থাকে একেকটি সাফল্যের গল্প।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।