আলফাডাঙ্গা( ফরিদপুর ) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বড় ছেলের অমানবিক অত্যাচারে গৃহহারা মৌলুদা মোবারক (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ নারী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রবিবার (৩ এপ্রিল) সকাল ১১টায় উপজেলার বিলমান্দলা গ্রামে ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধ নারী তার বড় ছেলে আরিফুজ্জামান মিঠুর (৪৭) বিরুদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন করেন। মৌলুদা মোবারক ওই গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে মৌলুদা মোবারক এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, আমার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। আমার বড় ছেলে আরিফুজ্জামান মিঠু দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও পর্যাপ্ত অর্থসম্পদ তৈরী করতে না পেরে দেশে ফিরে এসে নানা কৌশলে আমার স্বামীর সকল সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে একা ভোগ দখল করার চেষ্টা করে। সেইসাথে আমার স্বামীকে কৌশলে তার নিজের আয়ত্তে রেখে আমার বাকী সন্তানদের বিরুদ্ধে নানা ভাবে মিথ্যাচার করে তাদের বাবার সাথে শত্রুতা তৈরী করে। মা হিসেবে আমি প্রতিবাদ করায় আমার ও আমার স্বামীর মাঝে কৌশলে দূরত্ব তৈরী করে। আমার স্বামীকে আমার থেকে দীর্ঘ দেড় বছর দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমার স্বামীকে আমার কোন খোঁজ খবর নিতে দেয় না। এমনকি আমার কোন ভরণপোষণও দিতে দেয় না।
তিনি বলেন, এই ঘটনার জের ধরে আমার মেঝো ছেলে আশরাফুজ্জামান রঞ্জুকে তার আলফাডাঙ্গা বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে এবং তার পরিবারকে আলফাডাঙ্গা বাসা থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরবর্তীতে সেসব সম্পত্তি আমার বড় ছেলে দখলে নিয়ে যায়। আমার স্বামী একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে গেলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। পরে তিনি আমার বিভিন্ন বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে চেকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা ধার নেয়। পরবর্তীতে আমার বড় ছেলে তার বাবাকে দিয়ে অন্যকে দেওয়া চেকগুলো রঞ্জুর নামে মিথ্যা চেক চুরির মামলা দেয়। এরপর আমি আমার বড় ছেলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্থানীয় থানায় অবহিত করি। বিষয়টি জানতে পেরে বড় ছেলে মিঠু ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে আমার গায়ে হাত তোলে এবং আমাকে খুন করে লাশ গুম করার ভয় দেখায়। এতে বাধ্য হয়ে মিঠুর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করি। মামলায় জামিনে এসে পূর্বের ন্যায় আমার সাথে একই আচরণ করলে ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত সেসব মোবাইলে ভিডিও ধারণ করলে তাকেও মারতে তেড়ে আসে। পরবর্তীতে তার নামে মিথ্যাচার করে সমাজের কাছে মানহানি করার চেষ্টা করেন।
মৌলুদা মোবারক বলেন, এসব ঘটনার পরবর্তীতে আমার নিজের নামের ফসলি জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এই ঘটনা উল্লেখ করে থানায় অবহিত করি। এর জের ধরে বড় ছেলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এরপর কিছুটা সুস্থ হয়ে আদালতে আরেকটি মামলা করি। মামলার কথা জানতে পেরে গত ৩১ মার্চ আমাকে জোরপূর্বক এক পোশাকে ঘর থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়। একই সাথে আমার স্বামী মোবারক হোসেনকে দিয়ে আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। ইতোমধ্যে আমাকে তালাক দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। সেইসাথে আমার বড় ছেলে মিঠু আমাদের বসতবাড়ি আমার স্বামীর থেকে তার নিজের নামে লিখে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ নারী আরও বলেন, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকে তিনি এখন অন্যের বাড়িতে এক কাপড়ে আশ্রিতের মত দিনযাপন করছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে এসে তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারীর দেবর কবীর হোসেন ফকির, প্রতিবেশী মনির হোসেন, নেয়ামত হোসেন পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।