• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
চরভদ্রাসনে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে চরের জমি দখলের অভিযোগ

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর অপর পারে চরহরিরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ কবির খান (৫০) এর বিরুদ্ধে ভুমিহীন ও দুস্থ পরিবারের শতাধিক একর ফসলী জমি দখলের অভিযোগ করে চলেছেন ভুক্তভোগীরা। উক্ত আ’লীগ নেতা প্রভাব, প্রতিপত্তি ও পেশী শক্তির জোরে এলাকার অসহায় পরিবারের জমিগুলো দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ। এসব দখলীয় জমির উপর তিনি হাট-বাজার বসিয়ে ও বিভিন্ন জায়গায় ভিটি নির্মান করে বিক্রয় বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দুস্থ পরিবারের শতাধিক একর ফসলী জমিও জবর দখল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারগুলো গত তিন বছর ধরে উক্ত নেতার বিরুদ্ধে মামলা মোক্কাদ্দমা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাদের ন্যায্য হিংস্যা ফিরে পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের মৃত ছুরমান খানের ছেলে কবির খান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ক’বছর আগে উপজেলা আ’লীগের সদস্য হয়।
পরবর্তিতে কবির খানকে চরহরিরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মনোনীত করা হয়। এরপর থেকে কবির খান চরাঞ্চলের অসহায় পরিবারের জমি নিয়ে দখল দারিত্বর রাজত্ব কায়েম করেন বলে ব্যাপক অভিযোগ।
শনিবার এক ভুক্তভোগী অসহায় ও ভুমিহীন উক্ত ইউনিয়নের আমিনখার ডাঙ্গী গ্রামের মৃত নাজির মোল্যার ছেলে মোসলেম মোল্যা (৬২) জানায়, ভুমহীন পরিবার হিসেবে সরকার ১৯৮৭ সালে তার নামে ও তার স্ত্রী শুকুরজান খাতুনকে দুই একর কৃষি জমি বন্দোবস্ত দলিলমূলে বরাদ্দ দেয়। বন্দোবস্ত দলিল নং-৫৯৮, তাং-১৭/৫/১৯৮৭খ্রি.। আর ভুমহীন উক্ত পরিবারের জমিগুলো উপজেলার ১৪ নং চরশালেপুর মৌজার ১/৫৪৬ নং খতিয়ানের ৭০১/২৯৫ নং ও ২৯৬ নং দাগের অন্তভুর্ক্ত ফসলী জমি। মোসলেম মোল্যা বিগত ত্রিশ বছর ধরে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত জমিতে ফসল ফলিয়ে ও বৃক্ষ বাগান করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাসরত ছিল। গত তিন বছর আগে ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা কবির খান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অসহায় মোসলেম মোল্যার বৃক্ষ বাগান সহ আবাদী সবটুকু জমি জবর দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ। কবির খানের ছ্ত্র ছায়ায় সে সময় দখলদাররা মোসলেম মোল্যার ছেলেদের লাঠীসোটা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে বৃক্ষবাগান সহ সবটুকু ফসলী জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
একই দিন উক্ত চরের ১৪ নং চরশালেপুর মৌজার আরেক ভুক্তভোগী মৃত নৈমদ্দিন মোল্যার ছেলে সামচুদ্দিন মোল্যা (৬০) জানায়, ১৪ নং মৌজার চরশালেপুর গ্রামে আমাদের বাপ দাদা ও শরীকানাদের নামীয় আরএস ও এস রেকর্ডীয় সর্বমোট ১৭৫ একর জমির সবটুকু গত দু’বছর আগে চরের নেতা কবির খান জবর দখল করে নেওয়ার ফলে বর্তমানে সামচুদ্দিন মোল্যা দিন মজুরের কাজ বেঁচে আছে। সে আরও জানায়, বেদখলীয় ১৭৫ একর জমির আরএস মেশিন বসিয়ে ইরি ও বোরো ধানের আবাদ করে স্বচ্ছলতার সাথে বসবাস করছিলাম।
কিন্ত গত দু’বছর ধরে বাপ দাদার নামে রেকর্ডীয় জমিতে আমরা গেলেই কবির খানের লাঠীয়াল বাহিনী ছুটে এসে আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। তাই জীবন বাঁচানোর স্বার্থে ফসলী মাঠে স্থাপিত সেলো মেশিনগুলো পর্যন্ত ফেলে রেখে আমরা চলে এসেছি। সে আরও জানায়, মাত্র তিন মাস আগে ওই জমিতে ধান কেটে নেওয়ার সময় আমরা থানায় মামলা করেছিলাম। মামলা করার পর ফসলী মাঠের মধ্যে পুলিশের সামনে কবির খানের প্রায় এক দেড়শো লোক এসে ঘোড়া গাড়ী বোঝাই করে ধান কেটে নিয়ে গেছে। পুলিশ কোর্টে একটি প্রতিবেদন পাঠানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপকার করতে পারে নাই। এছাড়া বিভিন্ন সময় একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করেও আমরা কোনো ফল পাই নাই বলে ভুক্তভোগী জানান। সে আরও জানায়,
আমরা বেদখলীয় জমির দখল ফিরে পাওয়ার জন্য ফরিদপুর দেওয়ানী আদালতে ৬২/২২ নং একটি মামলা করেছিলাম। মামলাটি এক বছর চালানোর পর অর্থের অভাবে আর চালাতে পারি নাই। ফলে দখলদার কবির খান বহাল তবিয়তে জমিগুলো ভোগ করে চলেছেন।
কবির খানের বিরুদ্ধে ধান কাটার মামলার তদন্ত অফিসার চরভদ্রাসন থানার এসআই অমিও মজুমদার বলেন, “ প্রায় তিন মাস আগে কবির খানের লোকজন উক্ত চরের অনেক জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন একথা সত্য, সেমতে আমি কোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছি। কিন্ত বিজ্ঞ আদালত ফসলী মাঠের মানচিত্র উল্লেখ দেখিয়ে ঘটনাটি পূনঃবার তদন্তের জন্য থানায় পাঠিয়েছেন। তাই মামলার প্রতিবেদনটি তদন্তধীন রয়েছে”।
এ ব্যপারে উক্ত আ’লীগ নেতা কবির খানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ আমরা ভুমিহীনের দলিলমূলে জমিতে দখলে আছি। ক’বছর আগে ফসলী মাঠে সার্ভেয়ার নিয়ে জমি পরিমাপ করেই আমরা দখল করছি। আর বাদীপক্ষ মামলা করে আমাদের সাথে হেরে গেছে”। আর ভুক্তভোগী সামচুদ্দিন মোল্যা জানায়, “ আমাদের বাপ দাদার নামে আরএস ও এসএ রেকর্ডীয় ১৭৫ একর জমির মধ্যে ১৪ নং চরশালেপুর মৌজার ২৮২ নং খতিয়ান ও ৩১৯ নং খতিয়ান সহ ৭৮৯ নং দাগ, ৮৩০ নং, ৮৪৩ ও ৮৪৪ নং দাগের জমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্ত কবির খান অন্য একটি ১৫০৪ নং দাগের বন্দোবস্তকৃত ১২টি ভুমহীনের দলিল নম্বর উল্লেখ করে কোর্টে জবাব দিয়েছে। সেখানে জমির পরিমান মাত্র ১২ একর, আসলে অর্থের অভাবে আমরা মামলা চালাতে পারি নাই এবং আমাদের লোকজন নাই বিধায় কবির খান
আমাদের অসহায়াত্বের সুযোগ নিয়ে চরের জমি জবর দখল করে খাচ্ছে”।
একই কায়দায় চরের নেতা কবির খানের বিরুদ্ধে উক্ত ইউনিয়নের পশ্চিম চরশালেপুর গ্রামের আবুল কালামের এক একর ফসলী জমি, শহীদ মোল্যার এক একর, চান্দা খানের দুই একর জমি, ১৩ নং শালেপুর মৌজার মোঃ মোনায়েম খানের ৪ একর জমি, শেখ শুকুরের দুই একর জমি, করিম খালাসীর দেড় একর জমি, মৃত চান্দু মেম্বারের ছেলে মোতালেব মাষ্টারের দুই একর জমি, নালু মোল্যার দেড় একর সহ শতাধিক একর জমি জবর দখল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ভুক্তভোগীদের মধ্যে উপজেলার চরশালেপুর গ্রামের মৃত শেরজন খানের ছেলে মোঃ মোনায়েম খান বলেন, “কবির খান চরে বসে তার লাঠীয়াল বাহিনী দিয়ে অসহায় পরিবারের জমি দখল করে থাকে আর তার আরেক ভাই আব্দুস ছালাম খান ফরিদপুর শহরে বসবাস করে কোর্ট কাচারী ও অফিস আদালত ম্যানেজ করে থাকে। এরা দুই ভাই মিলে চরে একটা
দখল দারিত্বর রাজত্ব কায়েম করেছে। সে আরও জানায়, তাদের দখলদারিত্বর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম বলে ছালাম খান আমার নামে কোর্টে চাঁদাবাজী মামলা করে হয়রানী করে চলেছে”।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।