ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নসহ আশপাশের ছয় ইউনিয়নের প্রায় ১২ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
পৌনে ৯ হাজার ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া ভাসমান সেতুটি গ্রামের মানুষের নিজ উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে। এতে অবশ্য ৫২ জন ব্যক্তি আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। আর এতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
মধুমতি নদীর বাঁওড়ের ওপর এ সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে। সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অচিরেই এটির ওপর দিয়ে চলাচল শুরু হবে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার টিটা, টিটা পানাইল, পানাইল, শিকারপুর, ইকরাইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ প্রতিদিন এ শাখা নদের (বাঁওড়) মধ্য দিয়ে নৌকায় পারাপার হতেন। এতে কৃষিপণ্য ও নানা ধরনের মালামাল নিয়ে পার হতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো।
এ ছাড়া শিশু এবং শিক্ষার্থীরা পারাপারে অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। এতে অর্থ ও সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় সবার। তাই এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সেই দাবি পূরণ হয়নি কয়েক গ্রামের মানুষের।
অবশেষে টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপনের উদ্যোগে টিটা, টিটা পানাইল, পানাইল, শিকারপুর, ইকরাইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের লোকজন মিলে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রক্রিয়ায় অর্থ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন এলাকার প্রায় ৫২ জন ব্যক্তি। এ ছাড়া অসংখ্য মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় ভাসমান সেতু নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে। অচিরেই এ সেতু উদ্বোধন করা হবে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এখানে পারাপারের জন্য মাত্র একটি খেয়া নৌকা রয়েছে। এ ঘাট পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন কয়েক হাজার মানুষ। এতে তাদের অর্থ ও সময় নষ্ট হয়। এ ভাসমান সেতু নির্মাণ হওয়ায় আমাদের আর অপেক্ষা করতে হবে না, সময় নষ্ট হবে না।
টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন জানান, এ অঞ্চলে একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পোস্ট অফিস রয়েছে। নানা প্রয়োজনে মানুষকে এখানে আসতে হয়। বহু আবেদন-নিবেদন করার পরও ওই স্থানে কোনো সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা টিটা খেয়াঘাট এলাকায় চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, এ সেতু নির্মাণে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর এ সেতু ৮ হাজার ৮৫২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ হবে। এতে ২৫০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫২টি প্লাস্টিকের ড্রাম ও ৬০ স্টিল পাত দিয়ে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মাণ করছে যশোরের বিশ্বাস ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। এ সেতুর ওপর দিয়ে চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট আকারের যান চলাচল করতে পারবে।
ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন জানান, এ সেতুর নকশা করেছেন টিটা এলাকার বাসিন্দা মুকুল খান। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এ সেতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এ সেতুর মাঝামাঝি ১২ ফুট চওড়া ও ছয় ফুট উঁচু রাখা হয়েছে। যাতে করে সেতুর নিচ দিয়ে বাঁওড়ে যেতে নৌকা চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয়। ওই এলাকায় ভাসমান সেতু নির্মাণে খুশি এলাকাবাসী, তাদের আর খেয়া নৌকার জন্য সময় নষ্ট হবে না।