করলা বা উচ্ছে
করলা শুনলেই অনেকে নাক মুখ কুঁচকে ফেলেন। করলার তেঁতো স্বাদ অনেকেই পছন্দ করেন আবার অনেকেই একেবারেই মুখে তুলতে পারেন না এই সবজিটি। তিতা করলার স্বাদ সবার পছন্দের না হলেও এর আছে অনেক গুণ। নিয়মিত তিতা করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১- ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি। জেনে নিন করলার ৭টি স্বাস্থ্যউপকারীতা সম্পর্কে।
করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। এলার্জি প্রতিরোধে এর রস দারুণ উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। করলায় যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ছাড়াও এতে রয়েছে বহু গুণ।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা হাসিনা আকতারের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই থাকে ১০০ হাত দূরে। এবার জেনে নিন, করলার আরো পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-
১. শ্বাসরোগ দূর করে
করলার রসে আছে অনেক গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজমপ্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
২. তারুণ্য ধরে রাখে
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর তেতো রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন—এমন রোগীর উত্তম পথ্য করলা। করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথারও উপশম করে করলা। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। স্ক্যাভিজের মতো রক্তরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
৩. হজমে স্বস্তি আনে
করলার বড় গুণ হচ্ছে এটি হজমের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা আছে। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
করলায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তের চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
৫. রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়
রলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। কোনো ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়তে সাহায্য করে।
৬. সুগার নিয়ন্ত্রণে
করলা অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।
৭. ক্যানসার প্রতিরোধী
করলায় আছে যথেষ্ট লৌহ, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এন্টি অক্সিডেন্ট-ভিটামিন এ এবং সি বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এছাড়া করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন।
৮. হার্ট অ্যাটাক রোধ করে
করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল। এতে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালিতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা।
৯. খাবারে রুচি আনে
খাবারে অরুচি দেখা দিলে, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে ফলের রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
১০. ম্যালেরিয়া রোগীর পথ্য
ম্যালেরিয়ায় করলা পাতার রস খেলে খুব উপকার মেলে। এছাড়া ম্যালেরিয়ার রোগীকে দিনে তিনটে করলার পাতা ও সাড়ে তিনটি আস্ত গোলমরিচ এক সঙ্গে থেঁতো করে নিয়ম করে ৭ দিন খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। করলার পাতার রস খেলে জ্বর সেরে যায়। শরীর থেকে কৃমি দূর করতেও করলা কাজ করে।
১১. বাতের ব্যাথা নিরাময়
দেহ থেকে বাতব্যাথা তাড়াতে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে।
১২. ঔষধি গুণ
শরীর কামড়ানি, জল পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমিভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছে বা করলার পাতার রস উপকারী। এক চা চামচ করলা পাতর রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।