চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ঃ-
“পদ্মায় জাল ফেললেই টানে টানে উঠে আসছে জাটকা ইলিশ। চলতি শুস্ক মৌসুমের শেষের দিকে হঠাৎ মনে হচ্ছে পদ্মায় পানি সমান জাটকা এসে ভরে রয়েছে। গত ক’দিন ধরে জেলেদের সাথে চরাঞ্চলের প্রায় সব গৃহস্থ পরিবার মাছের নেশায় জাটকা শিকারে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে। তাই আমিও জেল জরিমানার ডর না কইর্যা বাড়ীর পুলাপান নিয়া পদ্মায় এসেছি কারেন্ট জাল বাইতে। জাল ফেলার পর প্রতি টানে টানে উঠে আসছে দু’চারটি করে জাটকা ইলিশ। মাত্র দুই ঘন্টা জাল বাইয়্যা দশ কেজির মতো জাটকা ইলিশ পাইছি। এ বছর পদ্মার জাটকাগুলো খাইতেও মজা বাজারে দামও ভালো। এ বছর জাটকা মৌসুমে পদ্মায় কোনো আইনের লোক আসে নাই। আর আইনের লোকের টের পেলে আমরা পদ্মা চরের ভাঙনের গোপে আড়াল হয়ে থাকি”। মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের এক গৃহস্থ পরিবার মোঃ ইব্রাহিম বেপারী (৪৮) কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা শিকার কালে এসব কথা বলে উঠেন।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতে সম্প্রতী ঝাঁকে ঝাঁক জাটকা ইলিশ এসে ছয়লাব হয়ে রয়েছে। আর অসাধু জেলেরা ও চরাঞ্চলের গৃহস্থ পরিবারগুলো একযোগে যত্রতত্র কারেন্ট জাল দিয়ে নীধন করে চলেছে জাটকা ইলিশ। অত্র উপজেলায় রয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশত পেশাদারী জেলে। এরা প্রত্যেকে একটি করে ছোট্ট ট্রলার ও কারেন্ট জাল নিয়ে পদ্মা নদীতে রাতভর নীধন করে চলেছে জাটকা ইলিশ। এছাড়া কিছু অসাধু জেলে পদ্মা নদীর ক’য়েক কি.মি জলমহাল জুড়ে বেড়জাল দিয়ে ঘিরে রাখার পর আবার দু’টি ট্রলারের মাধ্যমে ৮/১০জন জেলে দড়ি ধরে বেড় জাল টেনে উঠাচ্ছে। এতে আটক হচ্ছে মনে মন জাটকা ইলিশ। সম্প্রতী উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সাথে সাথে পদ্মা নদী হয়ে ওঠেছে যেন অসাধু জেলেদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন সন্ধার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত ইঞ্জন চালিত নৌকা আর জাল নিয়ে পদ্মার বুক চোষে বেড়াচ্ছে শত শত জাটকা শিকারী। সকাল হলেই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মনে মন জাটকা ইলিশ। আর দেশের এ মৎস্য সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেও না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
মঙ্গলবার এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা খাতুনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “আমার নতুন পোষ্টিং হয়েছে। পদ্মায় জাটকা নীধনের বিষয়টি শুনেছি। অচিরেই পদ্মায় জাটকা নীধনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে”। একই দিন উপজেলা মৎস্য অফিসার নাঈম হোসেন বিপ্লব বলেন, “খুব শীগ্রই আপনারা পদ্মায় অভিযানের খবর পাবেন। জাটকা সংরক্ষনের জন্য স্থানীয় সাংবাদিক সহ আমরা সকলের সহায়তা কামনা করছি”।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, উপজেলা পদ্মা নদীর দিয়ারা গোপালপুর মৌজার জলমহালে, চর কল্যানপুর মৌজার জলমহাল, চর কালকিনিপুর, চর তাহেরপুর, চর মির্জাপুর, চর শালেপুর, উত্তর শালেপুর, ভাটি শালেপুর, চর হাজীগঞ্জ মৌজা, চর মোহনমিয়া, মাঝিকান্দি, চরহরিরামপুর, চর ঝাউকান্দা, চর হোসেনপুর, জাকেরের সুরা মৌজা, টিলারচর মৌজা, মাথাভাঙ্গা ও চর মঈনূট চর মৌজার বিশাল জলমহলে প্রতিদিন সন্ধা থেকে ভোররাত পর্যন্ত চালানো হচ্ছে জাটকা নীধনের মহড়া। এসব আটককৃত জাটকা ইলিশ বিভিন্ন বাজারের জেলেদের নির্দৃষ্ট আড়ৎদারের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে থাকে।
#
মোঃ মেজবাহ উদ্দিন
চরভদ্রাসন, ফরিদপুর
তাং-০৪/০২/২০২৫ইং