• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
করোনার অ্যান্টিজেন টেস্ট কাল থেকে

ছবি প্রতিকী

কম সময়ে করোনা শনাক্তে আগামীকাল শনিবার থেকে দেশে বিনামূল্যে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি কিন্তু পিসিআর টেস্ট নেই, এমন ১০ জেলায় এ পরীক্ষা শুরু হবে। এসব জেলার সদর হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে পারবে এবং ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই ফল জানতে পারবে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় যাদের করোনা নেগেটিভ আসবে, তাদের নমুনা আরটিপিসিআর টেস্ট করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার তাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষায় জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার বায়োসেন্সর কোম্পানির এক লাখ ‘স্ট্যান্ডার্ড কিউ’ কিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। আরও এক লাখ কিট আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দেশে এসে পৌঁছাবে। অবশিষ্ট কিট কেনার প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। এগুলো শেষ হতে হতে বাকি কিট চলে আসবে। নমুনা সংগ্রহ ও নির্ভুল পরীক্ষার জন্য জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের গত বুধবার রাজধানীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, শনিবার থেকে শুরুর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। কোনো জেলায় যদি পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় কোনো ঝামেলা থাকে, তাহলে সেখানে দু’একদিন দেরি হতে পারে। তবে আশা করছি শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু হয়ে যাবে।

প্রথম দফায় আগামীকাল শনিবার থেকে যে ১০ জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, সেগুলো হলোগাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, পটুয়াখালী ও সিলেট।
ইতিমধ্যেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার এক লাখ কিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে চাহিদা দিয়েছিল, সে অনুযায়ী দুই লাখ কিটের অর্ডার করেছি। প্রথম দফায় এক লাখ কিট অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা দিয়ে অধিদপ্তর পরীক্ষা শুরু করবে। আশা করছি বাকি এক লাখ আগামী সপ্তাহে পৌঁছে যাবে। এক লাখ খরচ হওয়ার আগেই বাকি এক লাখ চলে আসবে। ধারাবাহিকভাবে বাকি কিট আনার জন্য ডিপিএম (ডিরেক্ট প্রকিউরম্যান্ট মেথড, সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া) হয়ে গেছে। এগুলো হতে হতে বাকিগুলো চলে আসবে।

কোন ধরনের কিট আমদানি করা হয়েছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অধিদপ্তর যেকোনো একটা কিট আনতে বলেছিল। একটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার বায়োসেন্সর কোম্পানির স্ট্যান্ডার্ড কিউ কিট ও আরেকটি হচ্ছে জার্মানির অ্যাবট কোম্পানির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ করা এই দুই ধরনের কিট পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অ্যাবট কিট এখন কোরিয়াতেও উৎপাদন হচ্ছে, জার্মানির আসল কিট নয়। এর মধ্যে আমরা স্ট্যান্ডার্ড কিউ কিটের দাম কিছুটা কম পেলাম। ফলে আমরা স্যান্ডার্ড কিউ কিটটাই আপাতত এনেছি।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, যে পরিমাণ কিট এসেছে তা দিয়ে আমরা পরীক্ষা শুরু করতে পারব। যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি এবং পিসিআর টেস্ট নেই, এমন ১০টি জেলায় আমরা প্রথমে শুরু করছি। ক্রমান্বয়ে আস্তে আস্তে পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াব। কারণ টেস্টে কোনো ঝামেলা হচ্ছে কি না, সেটা মনিটরিং করার জন্য একসঙ্গে সব জায়গায় পরীক্ষা শুরু করা হচ্ছে না।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে প্রথম দফায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে আরটিপিসিআর টেস্ট হচ্ছে। অ্যান্টিজেন টেস্টে কেউ যদি নেগেটিভ হয়, তাকে আরটিপিসিআর টেস্ট করতেই হবে। সুতরাং যে সমস্ত জায়গায় আরটিপিসিআর টেস্ট আছে, সেখানে আমরা এখনই অ্যান্টিজেন টেস্ট দিচ্ছি না। পরিবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে এসব জায়গাতেও করা হবে।

মানুষ কীভাবে নমুনা দেবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই পরীক্ষা করার জন্য জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা আসবে, তাদের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। যারা পজিটিভ হবেন, তারা নিশ্চিত পজিটিভ। আর যারা নেগেটিভ তাদের নমুনাগুলো পিসিআর টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট ল্যাবগুলোতে পাঠানো হবে।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বিনামূল্যে হবেজানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আপাতত আমরা কোনো ফি নিচ্ছি না। এখন পর্যন্ত বিনামূল্যেই পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ যেহেতু নমুনা নেওয়া হচ্ছে এবং নেগেটিভ হলে আবার পিসিআর টেস্ট করা হবে, সে কারণে অ্যান্টিজেন টেস্টে কোনো ফি যোগ করিনি। আমরা পিসিআরেও প্রথম থেকে ফি নেইনি। পরে ফি নির্ধারণ করেছি যাতে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট না হয়, সে জন্য। সেক্ষেত্রে যদি দেখি অ্যান্টিজেন টেস্টেও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা হচ্ছে, তখন হয়তো ফি নির্ধারণ করা হবে। এখন পর্যন্ত ফি নির্ধারণ করিনি।

দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হলে করোনা শনাক্তের পথ আরও সহজ হবে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাসুবিধা বাড়বে। অ্যান্টিজেন হচ্ছে ভাইরাসের প্রোটিন, যা শরীরের ভেতর প্রবেশ করে কোষের প্রোটিন তৈরির পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। শরীরের ভেতর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটস প্রবেশ করলেই শরীর সেটাকে অ্যান্টিজেন হিসেবে গণ্য করে। কারও পরীক্ষায় অ্যান্টিজেন পাওয়া গেলে তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোনো মেশিনের প্রয়োজন নেই, শুধু কিট দিয়ে দ্রুত সময়ে নির্ণয় সম্ভব। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা মূল্য সাশ্রয়ী। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল পাওয়া সম্ভব।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে টেস্টের ফল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এ টেস্টে তেমন কোনো ধরনের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি দরকার হয় না বলে ফিল্ডে বা মাঠপর্যায়েই এ পরীক্ষা চালানো সম্ভব। বিশেষ করে যেকোনো কারণে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যদি রোগী আসে, সে সময় যদি আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট করে ফেলতে পারি, তিনি যদি করোনামুক্ত হন তাহলে আমরা তার স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু যদি করোনা পজিটিভ হন, তাহলে তাকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা করতে পারি। এছাড়া আমাদের ট্রেসিং টেস্টিংয়ের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন।

দেশে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু নিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে ঠেলা-ধাক্কা চলছিল। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বারবার তাগাদা ও কয়েক দফায় প্রস্তাবনার পরও অনুমোদন মিলছিল না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। অবশেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব বিলকিস বেগম এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন গাইডলাইন অনুযায়ী সব সরকারি হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রক্রিয়াধীন কভিড-১৯ ল্যাব সম্প্রসারণ নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে এত দিন ধরে চলা আরটিপিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারেজ রি-অ্যাকশন) পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দেয়। কমিটির বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুরও সুপারিশ করেন। গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনার র‌্যাপিড টেস্ট বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। নীতিমালার ওপর মতামত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে। একাধিক সভার পর কমিটি গত ২৩ আগস্ট তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দেয়। কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর জোর সুপারিশ করে। এরও প্রায় আড়াই মাস পর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত ১২ নভেম্বর কভিড-১৯ পরীক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা করে। সবশেষে নীতিমালা চূড়ান্ত করারও প্রায় পৌনে এক মাস পর শনিবার থেকে এই পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। দেশ রুপান্তর

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।