করোনা প্রতিরোধে লকডাউন সরেজমিন দেখতে ২৭ মার্চ তানোরে যান রাজশাহীর ডিসি মো. হামিদুল হক। সঙ্গে ছিল একদল ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ। গোল্লাপাড়া বাজারের এক কোণে অশীতিপর এক বৃদ্ধ কাগজ কুড়াতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। অচেনা মানুষ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যান বৃদ্ধ। ভয়ার্ত কণ্ঠে হাতজোড় করে ষাটোর্ধ্ব আতাবুর রহমান ডিসিকে বলেন, ‘বাবা আমার যদি ভুল হয় মাফ করে দেন। আমি আর বাজারে আসব না।’
বাবার বয়েসী একজন মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ ডিসিসহ সবার অন্তরাত্মাকে নাড়িয়ে দেয়। প্রটোকল ভুলে বৃদ্ধকে বুকে জড়িয়ে ধরেন ডিসি। শোনেন তার জীবন কষ্টের কথা। ডিসি সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধের হাতে তুলে দেন খাদ্যপণ্যসহ দরকারি জিনিস। বৃদ্ধ আতাবুর রহমানকে খাস জমিতে সরকারি খরচে একটা ছোট্ট বাড়ি করে দেয়ার নির্দেশ দেন ডিসি।
রাতে বাসায় ফিরে ডিসি হামিদ তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, এই বয়সে বৃদ্ধের ঘরে থাকার কথা। কিন্তু দু’মুঠো চাল কেনার জন্য প্রখর রোদে তিনি কাগজ কুড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশ্ব কাঁপানো করোনাও বৃদ্ধের দারিদ্র্যকে পরাজিত করতে পারেনি। ডিসির এই পোস্টটি ভাইরাল হয়। প্রশংসায় ভেসে যান ডিসি হামিদ।
২১ মে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টের ফুটপাতে প্রখর রোদে বসে আড়াই বছরের শিশুকে পাশে শুইয়ে দিয়ে খাবার চাচ্ছিলেন এক অসহায় নারী। নারীর দুর্ভাগ্যের কাহিনী ওঠে আসে গণমাধ্যমে। বিষয়টি নজরে আসে ডিসির। তিনি ওই নারীকে খুঁজে বের করে হাতে তুলে দেন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য।
‘রাজশাহী মেডিকেলের আইসিইউতে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন আয়া আসমাউল হুসনা। এক বছরের শিশু নিয়ে তার দুঃখের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ডিসি হামিদ ২ মে এক মাসের শিশুখাদ্য ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার এবং কিছু নগদ টাকা নিয়ে নগরীর হেতেমখা এলাকায় হুসনার বাসায় হাজির হন।
হাসপাতালে কাজ করেন বলে হুসনার বাড়িওয়ালা যন্ত্রণা করেন। ডিসি হামিদ বাড়িওয়ালাকে জানিয়ে দেন তিনি যেন হুসনার পরিবারকে মানসিক পীড়ন না করেন।
৭ এপ্রিল ত্রাণ চাইতে গিয়ে এক ইউপি সদস্যের নির্যাতনের শিকার হন চারঘাটের পঞ্চাশোর্ধ্ব স্বামী পরিত্যক্ত রেজিয়া বেগম। তাকে ভর্তি করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। খবর পেয়ে আহত নারীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ডিসি হামিদ। ওই নারীর চিকিৎসা ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি।
রাজশাহীতে করোনা প্রতিরোধে লকডাউন কার্যকরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডিসি হামিদ। দেশের এই সংকটকালে ৩ লাখ ৯০ হাজার পরিবারের কাছে সরকারি সহায়তা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। ডিসি হামিদ যুগান্তরকে বলেন, জনসেবার জন্যই প্রশাসন। আমি রাজশাহী জেলা প্রশাসনকে একটি মানবিক প্রশাসন করে তোলার চেষ্টা করেছি, যাতে সরকার ও প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা আরও গভীর হয়।