• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

জোরপূর্বক জমি দখল করতে না পেরেই

মধুখালীতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় কৃষক সিদ্দিকুরকে

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোড়কদী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে জোরপূর্বক জমি দখল করতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে কৃষক সিদ্দিকুর রহমান মোল্লাকে (৬৩)। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবীতে রাজপথে নেমেছে পরিবারের সদস্যরা, স্বজন ও স্হানীয় এলাকাবাসী। মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ সহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে এলাকাবাসী।

মানববন্ধন চলাকালে স্হানীয় এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে এ নির্মম হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। বক্তারা বলেন, জোরপূর্বক জমি দখল করতে না পেরেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় কৃষক সিদ্দিকুর রহমান মোল্লাকে।

এদিকে শুক্রবার (৩ জুলাই) রাতে সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার মেঝো ছেলে কামরুল মোল্লা বাদী হয়ে ৬০ জনকে আসামী করে মধুখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার (৪ জুলাই) মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর-৪, তারিখ : ০৪-০৭-২০২০ ইং।

এর আগে শুক্রবার (৩ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে নিহত সিদ্দিকুর রহমানের মরদেহ নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাগাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্হানীয় এলাকাবাসী। পরে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদুজ্জামান মুরাদ, উজ্জ্বল হোসেন, নিহতের ছেলে কামরুল, ভাতিজা মাসুদ, রব মোল্যা, কামাল হোসেন প্রমূখ। মানববন্ধন কর্মসূচীতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

মানববন্ধন কর্মসূচী পালন শেষে হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবীতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে উত্তেজিত জনতা। পরে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্হলে উপস্হিত হয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় উত্তেজিত জনতা।

মানববন্ধন চলাকালে কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, কৃষক সিদ্দিকুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ জমি-জমা নিয়ে বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খান, বাগাট বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন খান লাল, আহমেদ আলীর সাথে বিরোধ চলছিল সিদ্দিকুরের। জমি দখল করতেই সিদ্দিককে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা।

তিনি আরো বলেন, বাগাট বাজার সংলগ্ন খোদাবাসপুর মৌজায় তিনটি জমি রয়েছে সিদ্দিকুর ও তার ভাইদের নামে। জমিগুলো তারা প্রায় ৬০ বছর ভোগ দখল করে আসছিল। সম্প্রতি সময়ে ওই জমিগুলোর মধ্যে অংশ রয়েছে বলে দাবী করে আসছিল মতিয়ার খান, লাল খান সহ তাদের ভাইয়েরা। এই জমি জোরপূর্বক দখল নিতে লাল খান ও তার লোকজনের সাথে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করে আসছিল সাবেক ইউপি সদস্য আহমেদ আলী।

উজ্জ্বল বলেন, জমি দখল নিতে লাল খান ও আহমেদ আলী বিভিন্ন সময়ে নিহত সিদ্দিক ও তার ছেলেদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এমনকি সিদ্দিককে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় লাল খান তার সহযোগী আলমগীর, হাফিজুর, মামুন, সুজাত, মাহবুব সহ ৪০/৫০ জনকে সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্দিকুরের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। হামলায় সিদ্দিকুর মারা যায়। এসময় সিদ্দিকুরের ছেলে কামরুল সহ কয়েকজন গুরুতর আহত।

তিনি বলেন, সিদ্দিকুর মৃত্যুর আগে বিষয়টি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানিয়েছিল কিন্তু লাল খান স্হানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। অবশেষে সিদ্দিককে নির্মমভাবে হত্যা করলো ওরা।

নিহত সিদ্দিকুরের ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কামরুল জানান, তিনি বৃহস্পতিবার ভোরে মাগুরা বাজারে মরিচ বিক্রি করতে যান। মরিচ বিক্রি করে বাড়িতে ফিরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভাত খাচ্ছিলেন এমন সময় লাল খান সহ আহমেদের ৪০/৫০ জন সমর্থক রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে এসে তাকে ও তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তিনি ও তার বাবা যেতে অস্বীকার করলে রামদা দিয়ে কোপ দেন তারা। আহত হন তিনি ও তার বাবা সিদ্দিকুর। বাবার বুকের ডান পাশে রাম দায়ের কোপ লাগে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

তিনি আরো জানান, বাগাট বাজার সংলগ্ন খোদাবাসপুর মৌজায় তাদের ১ একর ৮৫ শতাংশ, ২৯ শতাংশ ও ৩৮ শতাংশের তিনটি জমি রয়েছে। এই জমিগুলোর মধ্যে ১ একর ৮৫ শতাংশ জমিতে ৩৫ শতাংশ, ২৯ শতাংশ জমিতে ১০ শতাংশ এবং ৩৮ শতাংশ জমিতে ১৩ শতাংশ জমি দাবী করে আসছিল মতিয়ার খান, লাল খান ও আহমেদ আলী।

কামরুল জানান, জমিগুলো প্রায় ৬০ বছর আমরা দখলে রয়েছি। দীর্ঘদিন যাবত জমিগুলো দখল করতে মতিয়ার খান, লাল খান, আহমেদ আলী সহ তার লোকজন আমার বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও জমিগুলো দখল নিতে না পারায় আমাদের উপর হামলা চালায় তারা। আমার বাবার জীবন কেড়ে নিল ওরা। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসির দাবী জানাই।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে শুক্রবার দুপুরে বাগাট ঈদগাহ ময়দানে নিহত সিদ্দিকুরের জানাজা শেষে নিজ গ্রাম কাটাখালী কবরস্হানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এদিকে শুক্রবার (৩ জুলাই) রাতে সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার মেঝো ছেলে কামরুল মোল্লা বাদী হয়ে বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খান, বাগাট বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন খান লাল, সাবেক ইউপি সদস্য আহমেদ আলী, আলমগীর, হাফিজুর, মামুন, মাহবুব, সুজাত সহ ৬০ জন এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনকে  আসামী করে মধুখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। শনিবার (৪ জুলাই) মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর-৪, তারিখ : ০৪-০৭-২০২০ ইং।

নিহত সিদ্দিকুর রহমান মোল্লার স্ত্রী শাহনাজ বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী খুব নিরীহ মানুষ ছিলেন। তিনি কারো সাথে কোনোদিন খারাপ আচরন করেননি। তবুও ওরা নিরীহ মানুষটিকে নির্মমভাবে হত্যা করলো। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জোরপূর্বক আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা করছিল মতিয়ার, লাল ও আহমেদ আলী। আমার স্বামীকে অনেকবার হুমকি ধামকি দিয়েছিল তারা। সর্বশেষ জমি দখল করতে না পেরে আমার স্বামীকে মেরে ফেলল ওরা।

কোড়কদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মুকুল হোসেন বলেন, জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সিদ্দিকুরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় তার ছেলেসহ তিনজনকে আহত করা হয়। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি।

নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় কাটাখালী গ্রামের মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কোড়কদী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে কৃষক সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। নিহতের ছেলে বাদী হয়ে বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খান সহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার (৪ জুলাই) মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর-৪, তারিখ : ০৪-০৭-২০২০ ইং। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মো: মতিয়ার রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়ানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মধুখালী উপজেলার কোড়কদী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা (৬৩) এর বাড়িতে হামলা চালায় শাহাদাত হোসেন খান লাল সহ তার সহযোগীরা। হামলায় কৃষক সিদ্দিকুরের বুকের ডান পাশে রাম দায়ের কোপ লাগে। এসময় আহত হয় সিদ্দিকুরের ছেলে কামরুল সহ বেশ কয়েকজন। পরে এলাকাবাসী সিদ্দিকুরসহ আহতদের উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. কবির সর্দার সিদ্দিকুরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সিদ্দিকুর ওই গ্রামের মৃত আদিলউদ্দিন মোল্লার ছেলে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।