নিরঞ্জন মিত্র ( নিরু)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি) কর্তৃক আয়োজিত গত ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার মাদারীপুর সদর উপজেলার শ্রীনাথদি ইউনিয়নের কলাবাড়ী গ্রামে বারি সরিষা-১৪ ও ১৮ জাতের উৎপাদন কার্যক্রমের উপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ রফিউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ছালেহ উদ্দিন, মাদরীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ( বারি) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এ.এফ.এম. রুহুল কুদ্দুস।
এসময় মাঠ দিবস সমাবেশে সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আগত অর্ধশতাধিক চাষী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সগবি, বারি, ফরিদপুরের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ এবং স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ীর এমএলটি সাইটের বৈজ্ঞানিক সহকারী জনাব সাইফুর রহমান।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয় যা থেকে প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন তেল পাওয়া যায়। এদেশের কৃষকরা সাধারণত স্থানীয় জাতের সরিষার আবাদ করে থাকে যার হেক্টর প্রতি গড় ফলন মাত্র ৮৫০ কেজি বা প্রতি শতাংশে ৩.৫ কেজি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ ও বারি সরিষা-১৭ নামে যে স্বল্পমেয়াদী জাত উদ্ভাবন করেছে তার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৪ থেকে ১.৮ টন বা প্রতি শতাংশে প্রায় ৬ কেজি। যেসব কৃষকেরা দীর্ঘমেয়াদী (১০০-১২০ দিন) সরিষার জাত ব্যবহার করতে চান, তারা বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা জাত) ব্যবহার করতে পারেন যা রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহার হয়। বারি সরিষা -১৪ চেয়ে বারি সরিষা-১৮ শতাংশে প্রায় ২ থেকে ৬ কেজি বেশী ফলন দিয়ে থাকে। তাই, নতুন জাত আবাদে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয় ও খুব সহজে তাদের প্রচলিত ফসল ধারায় খাপ খাওয়াতে পারেন। কৃষকদের নতুন জাত ও প্রযুক্তি দ্বারা সরিষা আবাদের জন্য প্রধান অতিথি অনুরোধ করেন ফলে দেশে তেলের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব হবে।
সমাবেশে বারি সরিষা-১৪ ও ১৮ জাত সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। অংশগ্রহনকারী কৃষকগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ প্রদান করেন। তাঁদেরকে সহায়তা করেন বৈজ্ঞানিক সহকারীবৃন্দ।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী কৃষকগণ বারি সরিষা-১৪ ও ১৮ এর প্রতি কৌতুহলী হন এবং এর আবাদে সুবিধা-অসুবিধা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্যক ধারনা লাভ করেন। সগবি, ফরিদপুর এর তত্তাবধানে মাদারীপুরে ১০০ শতক জমিতে বারি সরিষা-১৪ ও ৩০০ শতক জমিতে বারি সরিষা-১৮ আবাদ করা হয়েছে। কৃষকেরা তাদের আবাদকৃত প্রচলিত তিন ফসল ভিত্তিক ফসল বিন্যাসে এ বারি সরিষা-১৪ ও ১৮ জাতটির সন্নিবেশনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।