রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর
মধ্যপ্রাচ্য ফেরত বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সহায়তা করছে কারিতাস বাংলাদেশ। বাংলাদেশি শ্রমিকরা স্বল্প মজুরিতে অভিবাসী শ্রমিক হয়ে সেখানে গিয়ে মালিক কর্তৃক শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ও আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসে।
বিদেশ ফেরত এসকল ঝুঁকিপূর্ণ ও অসচ্ছল নারী-পুরুষদের টেকসই ও স্থায়ী জীবিকা ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কারিতাস বাংলাদেশ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
রবিবার সকাল ১১ টায় শহরের টিটিসি কলেজ মিলনায়তনে কারিতাস বাংলাদেশ থেকে সহায়তা প্রাপ্ত মধ্যপ্রাচ্য ফেরত উপকারভোগীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় কারিতাস বাংলাদেশ তার কার্যক্রম তুলে ধরেন।
কারিতাস বাংলাদেশ অঞ্চলের মাঠ কর্মকর্তা জর্জ বৈরাগী বলেন, কারিতাস বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী ফেরত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে থাকে। আর.আর.এস.বি.আর.এম.ডাব্লু এই প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল অঞ্চলে ফরিদপুর সহ ৫ জেলায় কাজ করে থাকে। ২০২০ থেকে ২২ পর্যন্ত আমাদের এ প্রকল্প কাজ করে। আমরা আরো ৯ মাস প্রকল্প বাড়িয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি অদক্ষ অশিক্ষিত বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা নানা ভাবে বিদেশে গিয়ে নির্যাতিত ও প্রতারিত হয়ে থাকে। তারা দেশে এসে সামাজিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। আমরা মূলত তাদেরকে দক্ষ করে আর্থিক সহায়তা দিয়ে জীবিকায় ফিরিয়ে দেই।
তিনি আরো বলেন, ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলা, মধুখালী, সালথা, নগরকান্দা ও চরভদ্রাসন উপজেলার ২০৩ জন অভিবাসীকে দক্ষতা প্রশিক্ষন দেয়া হয়। প্রশিক্ষন শেষে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা অর্থ প্রদান করা হয়। এদের অনেককে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ট্রেইনার হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়।
উপকারভোগী মাফুজা আক্তার বলেন, আমি সৌদি আরবে পনের মাস থাকার পর ফিরে আসি। তারা আমাকে বেতন কম দিত। আমি দেশে ফিরে কারিতাস বাংলাদেশ এর মাধ্যমে প্রশিক্ষন নিয়ে তাদের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি।
মারিয়া আক্তর বলেন, আমি কারিতাস থেকে দক্ষতা প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে তারা আমাকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। আমি এখন গোছলের সময় শরীর ধোঁয়া সাবানের খোসা তৈরি করে দোকানে দোকানে বিক্রয় করি।
হেলাল শেখ বলেন, কারিতাস আমাকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তা দিয়ে আমি রিকসা ক্রয় করেছি।
সভার অতিথি ফরিদপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল কুদ্দসুর রহমান বলেন, ফরিদপুর জেলায় প্রায় ৭ হাজার বিদেশ ফেরত প্রবাসী রয়েছে। তিনি এসময় কারিতাস বাংলাদেশ এর কাজের পরিধি বাড়াতে এবং এই প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়ানোর অনুরোধ করেন।
বিষেশ অতিথি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, সরকার প্রবাসীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে। আপনারা দয়া করে দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাবেন না। দালালের মাধ্যমে বিদেশ গেলে প্রতারিত হবেন। সরকারের মাধ্যমে যান সরকার আপনার দায়িত্ব নেবে।
প্রধান অতিথি টিটিসি কলেজ প্রিন্সিপাল মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, আপনারা আগে নিজেরা দক্ষ হয়ে গড়ে উঠুন। নিজের যোগ্যগা প্রমান দিন। দেশে দক্ষতার অনেক সুযোগ আছে। কিন্তু দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। নিজেরা যোগ্য ও দক্ষ হলে বিদেশ যাওয়ার দরকারই হবে না।