হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর-২ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কমের সাথে সাথে সব কেন্দ্রেই বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই পাওয়া যায়নি একমাত্র প্রতিদ্বন্দী বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রাথীর এজেন্ট।
শনিবার (০৫ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ফরিদপুর-২ আসনের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার অন্তত ১০টি ভোট কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দুপুর দেড়টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ১৪ নং বাউতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের লাইনে দাঁড়ানোর কোনো সারি নেই। সেখানে ২৩১২ জন ভোটার থাকলেও কাস্টিং হয়েছে মাত্র ৩৯৬ ভোট। তবে, সেখানে নৌকার এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার শামসুল হক বলেন, এখানকার সবগুলো বুথে নৌকার পুলিং এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেননি প্রার্থী। কেন এজেন্ট দেননি এব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একই উপজেলার ১ নং নগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়েও নৌকার এজেন্ট পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রাথীর কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ওই কেন্দ্রে ২০০৬ জন ভোটার থাকলেও ভোট কাস্টিং হয়েছে মাত্র ৪২৮ ভোট।
তার কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট থাকলেও বটগাছ প্রতীকের কোনো এজেন্ট নেই কেন, এ প্রশ্নের জবাবে সেখানকার প্রিজাডিং অফিসার তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, এটা বলতে পারছিনা ; কেন এজেন্ট দেননি বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী; সেটা প্রার্থী নিজেই ভালো বলতে পারবেন।
তবে তিনি বলেন, বটগাছ প্রতীকের প্রার্থীর পর্যবেক্ষক দল ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে গেছেন।
এদিকে সালথা উপজেলার সালথা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সালথা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র গিয়েও বটগাছ প্রতীকের কোনো পুলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার জীবাংশু দাস এব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেনি।
এব্যাপারে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া মিয়া বলেন, আমি নির্বাচন পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তবে, কিছু কেন্দ্র বাদে প্রায় সব কেন্দ্রে আমার এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল।
তবে, বেশ কিছু কেন্দ্র থেকে তার পুলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন এ প্রার্থী।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর-২ আসনটি নাগরকান্দা, সালথা উপজেলা ও সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এতে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৭২ জন। এর মধ্যে নগরকান্দা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৫। সালথা উপজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬০ ও সদরপুরের কৃঞ্চপুর ইউনিয়নে ২৮ হাজার ১৩৭ ভোটার রয়েছেন। এ নির্বাচনে ১২৩ টি ভোট কেন্দ্রের ৮০৬টি ভোট কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম এ ভোট গ্রহণ করা হয়।
নির্বাচনে দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন, সদ্য প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহাদাব আকবর চৌধুরী লাবু ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনোনীত বটগাছ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে কাজ করেন।
খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ফরিদপুর-২ আসনের রিটার্নিং অফিসার মো. হুমায়ূন কবির বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ, র ্যাব, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গ, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংসদীয় এই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।