• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
আখের অভাবে রাজশাহীর চিনিকল বন্ধের আশঙ্কা 

মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহী:

রাজশাহী চিনিকলে গত মৌসুমে মাত্র দুইমাস আখ মাড়াই কার্যক্রম চলে। এই দুই মাসের মধ্যে মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কয়েকদিন মাড়াই কার্যক্রম বন্ধও ছিল। এদিকে বিভিন্ন কারণে চিনিকলের ইতিহাসে এই অঞ্চলে আখচাষ কমে দাঁড়িয়েছে সর্বনিম্নে। চাষিদের অভিযোগ, বিগত সময় মিল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে আখ বিক্রি করতে গিয়ে ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে অনেক চাষিকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তার ওপর চাষিদের আখ বিক্রির টাকা সময়মত হাতে না পাওয়ায় অনেকেই এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কয়েক বছর থেকে মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষে অর্থ ভর্তুকি ও ঋণের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সরবরাহ দিয়ে আসছিলেন। তবে এবার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চাষিদের কোনো সুবিধাই দেয়া হয়নি।

রাজশাহী চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মাকসুদা খাতুন বলেন, রাচিক জোন মোট ৯টি সাব-জোনে বিভক্ত। এ সকল এলাকায় মোট ৩ হাজার ৮৩৫ জন চাষি এ বছর মাত্র ৩ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে আখচাষ করেছেন যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার একর কম জমি। এর মধ্যে মিলের নিজস্ব খামারের জমিতে আখ রয়েছে ৫৫ একর। এদিকে মিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই আখ চাষ হয়েছে সর্বনিম্ন। তিনি বলেন, একযুগ আগেও এই এলাকায় ২০ হাজার একরের বেশি জমিতে আখচাষ করা হয়েছে। আর চাষির সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের ওপরে। সে সময় মিলে মাড়াই কার্যক্রম চলেছে প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত।

মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) মমিন হোসেন বলেন, গত বছর পহেলা ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই মাস মাড়াই চলে। তবে আখ সঙ্কটের কারণে হয়তো আগামী বছর মাড়াই কার্যক্রম আরও অনেক কম হবে। বর্তমানে মিলের গোডাউনে প্রায় এক হাজার ৮০০ মে.টন চিনি মজুত আছে।
পুঠিয়া সাব-জোন কর্মকর্তা শাহীন আলম বলেন, বর্তমানে মিলের অধীনে যে পরিমাণ আখ রয়েছে বিগত সময় এই একটি সাব-জোন এলাকায় এর চেয়ে বেশি আখ চাষ হয়েছে। তবে মিল এলাকায় আখচাষ বাড়াতে কর্তৃপক্ষ চাষিদের মাঝে বিভিন্ন ধাপে নগদ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে এসেছেন।

এর মধ্যে আদর্শ বীজতলার জন্য (এক একর জমিতে রোপণ উপযোগী) ৩ হাজার ৮০০ টাকা, সাথী ফসল উৎপাদন উপযোগী আখ খেতের জন্য প্রতি একরে ৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং সাধারণ চাষিদের মাঝে ২ হাজার টাকা নগদ দেয়া হতো। এ বছর মিল কর্তৃপক্ষ কোনো ভর্তুকি দেয়নি। এমন কি কৃষকদের ঋণের মাধ্যমে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়নি। যার কারণে এবার আখের চাষ খুবই কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চাষিদের আখচাষে আগ্রহ না থাকায় আগামী মাড়াই মৌসুমের পর হয়তো এই মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিনিকলের একাধিক মাঠকর্মী বলেন, বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর থেকে এলাকার অধিকাংশ চাষিরা আর আখচাষ করছেন না। এতে আখ সঙ্কটের কারণে মিলের মাড়াই কার্যক্রম চলে মাত্র দেড় থেকে আড়াই মাস। মিলের গতি ফেরাতে আখ চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে কর্তৃপক্ষ মাঠকর্মীদের চাপের মুখে রাখেন। আর আমাদের নিয়মিত বেতন-ভাতাও দেয়া হয় না। তার ওপর মিল সচল রাখতে সকল মাঠকর্মীরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে দেড় থেকে দুই একর পরিমাণ জমিতে আখ চাষ করেছেন। কিন্তু এবার চিনিকল এলাকায় যে পরিমাণ আখচাষ হয়েছে তাতে মাত্র একমাস মিলে মাড়াই কার্যক্রম চলতে পারে।পুঠিয়া উপজেলার রুবেল হোসেন নামের একজন আখচাষি বলেন, গত কয়েক বছর আগে এই এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা আখ চাষের ওপর বেশি নির্ভশীল ছিলেন। আমার নিজের ও বর্গা মিলে ১০ বিঘা জমিতে আখ রোপণ করেছি। কিন্তু সারা বছর খাটা-খাটুনি শেষে সেই আখ হয়ে দাঁড়ায় কৃষকের মাথার বোঝা। আখ ক্রয় মৌসুম শুরু হলে এক গাড়ি আখ (১২শ কেজি) বিক্রি করতে কেন্দ্রের সিআইসি ও মাঠকর্মীর পিছনে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে আখ উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধি শ্রমিকের অতিরিক্ত মুজুরি, জমি থেকে আখ সরবরাহে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে তিনগুণ। এরপর ক্রয় কেন্দ্রের ওজনকারীর কারচুপির সাথে সৌজন্যমূলক প্রতি গাড়িতে ২৫ কেজি আখ বোনাস দিতে হয়। এতো কিছুর পর চিনিকল সময় মত বিক্রিত আখের মূল্য দেয় না।চারঘাট নিমপাড়া এলাকার আখচাষি রুহুল আমীন বলেন, গত বছর আখ বিক্রির টাকা পেয়েছিলাম মিল বন্ধ হওয়ার প্রায় ৮ মাস পর। এবার টাকা পেয়েছি চলতি মাসের ১৪ তারিখে। যা মিল বন্ধ হওয়ার প্রায় সাড়ে চার মাস পর। আগে মিল সময়মত আখ বিক্রির টাকা না দিলেও দালাল চক্রের নিকট কমিশনে বিল বিক্রি করা যেত। এখন মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধের নিয়ম শুরু হয়েছে। যার কারণে পরিবারের যত সমস্যাই হোক না কেনো, মিল টাকা না দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সকল কারণে বিগত দিনের আখ চাষিরা এখন ওই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাজাহান কবির বলেন, কৃষকদের সময়মত টাকা না দিতে পারাটা দুঃখজনক। কারণ অনেক চাষিরা আছেন যারা আখ চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে আমরা গত এক সপ্তাহ আগে সকল চাষিদের বকেয়া আখের মূল্য পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, বিগত সময়ের কিছু জটিলতা হলেও বর্তমানে স্বচ্ছতার মাধ্যমে আখ চাষিদের আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। তবে মিলের উৎপাদিত চিনি সময়মত বিক্রি না হওয়ায় এ বছর চাষিদের আখের মূল্য দিতে একটু বেশি সময় লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, চাষিদের আখ চাষে আগ্রহ বাড়াতে মিলের পক্ষ থেকে বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে আখের মূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এবার চাষিদের মাঝে নগদ কোনো ভুর্তুকি বা ঋণের মাধ্যমে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়নি। আগামী মৌসুমের পর মিল বন্ধ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ওপরে কথা চলছে। তবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।