দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বাবা হারা মেয়ের আর্থিক অনুদান
বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে নিজের টিফিনের খরচ থেকে বেঁচে যাওয়া অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিলেন দিনাজপুরের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার ভাড়া এবং টিফিনের সামান্য করে টাকা বাঁচিয়ে সে ৫ হাজার টাকা এই করোনাকালে সরকারি ত্রাণ তহবিলে অসহায় মানুষের জন্য দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ মে) বেলা ১১টায় দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকার মৃত পল্লী চিকিৎসক আব্দুস সবুরের মেয়ে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সারা তাসনিম সৌমি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে নিজের টিফিনের খরচ থেকে বাঁচানো অর্থ ৫ হাজার টাকা অনুদানের অর্থ দিনাজপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহমুদুল আলমের হাতে তুলে দেন। এ সময় ওই স্কুল শিক্ষার্থীর সাথে উপস্থিত ছিলেন তার মা মোছা. মেরিনা বেগম।
এসময় সারা সারা তাসনিম সৌমির মা মেরিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী অনেকদিন হলো মারা গেছেন। আমি আমার বোনের বাসায় থাকি। আমার মেয়েটাকে আমি স্কুল যাওয়ার সময় ভাড়া এবং টিফিন বাবদ সামান্য কয়টা টাকা দিতাম। আমার মেয়ে সেই টাকা জমিয়ে আজকে (মঙ্গলবার) ডিসি স্যারের হাতে দিয়েছে। আমিও জানতাম না আমার মেয়ে এত গুলো টাকা জমিয়েছে। সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।’
দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সারা তাসনিম সৌমি বলেন, ‘আমার বাবা নেই। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে আম্মুর কাছে যে অটো ভাড়া ও টিফিন বাবদ টাকা নিতাম সেগুলোও একটা অংশ জমিয়ে রেখেছিলাম। আমি প্রতি বছরই এরকম করে কিছু টাকা জমিয়ে ঈদের আগে সেগুলো খরচ করতাম। কিন্তু এবার দেশের এই মহামারীতে আমার কাছে ঈদের খরচ করার থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এজন্য আজকে (মঙ্গলবার) ডিসি স্যারের কাছে নিজের জমানো ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি ভবিষ্যতে একজন সৎ মানুষ হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। এজন্য সবার কাছে ছোট্ট এই শিশুটি দোয়াও চেয়েছেন।’
এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ‘ছোট ছোট শিশুদের কাছ থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবানরা আছেন কিন্তু এভাবে হয়ত অনেকেই ভাবছেন না। আজকে শিশুটি তার জমানো টাকা ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে এর জন্য আমি গর্বিত। আমাদের দেশে এরাই একদিন প্রকৃত মানুষ হবে। দেশের সেবা করবে। সমাজের বিত্তবানরাও এই দুর্যোগকালীন সময়ে দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি।’