• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ভেন্টিলেটর, করোনা রোগীর শেষ ভরসা

চীনা কোম্পানির পোয়াবারো

বৈশ্বিক করোনা মহামারীর দুঃসময়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটরের চাহিদা। আক্রান্ত রোগীদের একটু শ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করতে এটি সংগ্রহে মরিয়া তাদের স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎ করেই বিপুলসংখ্যক চাহিদার জোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, জরুরি ভিত্তিতে নিয়ম বদলে নিজ দেশে চীনা ভেন্টিলেটরের প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য হয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৭৫ হাজার ভেন্টিলেটরের ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের সম্মিলিত চাহিদা রয়েছে আরও ৭৪ হাজার ভেন্টিলেটরের। পিপলস ডেইলি, বিবিসি।

সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে, কখনও কখনও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে রোগী ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না। এ সময় রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রোগীর মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যেতে পারে। এ জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ভেন্টিলেটর। এ যন্ত্রটি তখন নাক কিংবা মুখের ভেতর দিয়ে অথবা গলায় ছিদ্র করে লাগানো টিউবের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের কিরে নিয়ে আসে। কম্পিউটারের সাহায্যে এ যন্ত্রটি পরিচালনা করা হয়।

অ্যানালিটিক্স সংস্থা গ্লোবালডাটা বলছে, করোনা মহামারীর এ সময়ে বিশ্বজুড়ে আরও ৮ লাখ ৮০ হাজার ভেন্টিলেটরের চাহিদা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে ভেন্টিলেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পিছিয়ে নেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভেন্টিলেটর উৎপাদক দেশ চীনও। করোনা মোকাবিলার এ লড়াইয়ে শামিল হয়েছে তারাও। এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ মাধ্যম পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, দেশটির ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারকরা জীবন রক্ষাকারী এ মেশিনের সরবরাহ আরও সহজলভ্য করতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর এ সময়ে এ প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (এমআইআইটি)-এর একজন কর্মকর্তা জু কেমিন। তিনি জানান, তার দেশে ২১টি বড় মাপের ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাধ্যতামূলক সিই মার্কেটিংয়ের শর্ত পূরণ করেছে। জু কেমিন আরও বলেন, চীনা নির্মাতারা অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার ভেন্টিলেটরের অর্ডার পেয়েছে। বিদেশের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তারা পুরোদমে কাজ করছে।

এদিকে এনেস্থেশিয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেইজিং অয়নড কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের একজন সহকারী লি কাই এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উৎপাদন থেকে চালান পর্যন্ত আমাদের নষ্ট করার মতো একটি মিনিটও হাতে নেই। পাঁচ শতাধিক শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ফিরে এসে দিনরাত পরিশ্রম করছে।’ এ প্রতিষ্ঠানটি আগে থেকেই বছরে কয়েক হাজার ভেন্টিলেটর উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তবে সম্প্রতি তাদের বিদেশি অর্ডার বেড়েছে। ইতালি, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তারা ১ হাজারেরও বেশি ভেন্টিলেটরের অর্ডার পেয়েছে। তারা সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। লি কাই বলেন, গত জানুয়ারির শেষ দিক থেকে আমরা একটা দিনও সাপ্তাহিক ছুটি কাটাইনি। ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্ববাজারে নিজেদের উৎপাদিত কয়েকশ’ ভেন্টিলেটর সরবরাহ করেছি। সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক হাজার পণ্য।

অপরদিকে পিপলস ডেইলি বলছে, চীনে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটিতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে আবারও গতি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে জনবল বাড়াচ্ছে ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ শতাংশকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা দিতে হয়েছে এবং তাদের অর্ধেক সংখ্যক রোগীকে কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন তার ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাদের অনেকেরই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে এ ভেন্টিলেটরের।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পরিস্থিতি গুরুতর হলে রোগীর নিউমোনিয়া হয়, ফলে তার ফুসফুসের নিচে অংশ পানি জমে যায় এবং তখন শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই রোগী তখন আর শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্রটি তখন ফুসফুস থেকে পানি ও রোগীর দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে কৃত্রিমভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে না পারে ততক্ষণ ভেন্টিলেটর লাগানো থাকে। এ সময় তিনি কথা বলতে পারেন না, মুখ দিয়ে কিছু খেতেও পারেন না। সে সময় তাকে টিউবের সাহায্যে খাবার দেয়া হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।