নভেল করোনাভাইরাস হাত মেলানো, কোলাকুলি, হাইফাইভ, ফাস্ট বাম্পস বা ঘাড়ে হাত দেয়ার মতো সামাজিক ঘনিষ্ঠতার আচরণগুলোকে ছয় ফুট দূরে সরিয়ে দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, মহামারী শেষে এ ধরনের কিছু সামাজিক স্পর্শ চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে। গত এপ্রিলে একটি সাক্ষাত্কারে আমেরিকান বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফউসি বলেছেন, আমি মনে করি না যে আমাদের আর কখনো হাত মেলানো উচিত।
সামাজিক এ মিথস্ক্রিয়াগুলো সত্যিই যদি অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে এগুলোর বিকল্প কী হবে, তা নিয়ে এখনো মতৈক্যে পৌঁছতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে একটা বিষয় অনেকটা নিশ্চিত যে কিছু অভ্যাস সত্যিই অপরিচিত হতে চলেছে।
কানাডার রেইনসন ইউনিভার্সিটি কলেজের মনোবিজ্ঞানী অ্যারন স্মিথ বলেন, ‘আমরা যখন কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন থেকে বেরিয়ে আসব, আমার মনে হয় তখন আমরা কিছু লোককে দেখব যারা হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন আবার অনেককে দেখব যারা ১০ ফুট দূরত্ব মেনে চলছেন।’ এ বিষয়গুলো মানুষের সম্পর্কগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে। স্মিথ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আমরা অনেক বেশি আন্তর্ব্যক্তিক ও পরিবারভিত্তিক সংঘাতের মুখোমুখি হতে শুরু করব। আপনার অফিসের সহকর্মী বা ব্যবসায়িক অংশীদার আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল বা কোলাকুলি করার জন্য এগিয়ে এল তখন আপনি যদি নিজেকে সরিয়ে নেন, তাহলে সেই সম্পর্কের গতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
হাত মেলানো সম্ভবত সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি এবং এটা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। আর এটা আস্থা ও সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের গবেষক সান্দা ডলকোস। তিনি তার স্বামী ফ্লোরিন ডলকোসের সঙ্গে মিলে নিউরোমাইজিং অধ্যয়নগুলোতে দেখেছেন, হাত মেলানোর সময় মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণের অঞ্চলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি হাত মেলানো দেখাও মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্রগুলোর সক্রিয়তা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
তবে এ মহামারীর কারণে হাত মেলানো অদৃশ্য হয়ে যাবে বলে মনে করেন না ফ্লোরিন ডলকোস। তিনি বলেন, এক বছরেই যদি এটা অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে আমি হতবাক হয়ে যাব। আমি মনে করি না, এত সাধারণ ও সর্বজনীন বিষয়গুলো রাতারাতি হারিয়ে যাবে।
একেবারে হারিয়ে না গেলেও সামাজিক যোগাযোগের অনেকগুলো পরিবর্তিত হবে। কিন্তু এগুলোর বিকল্প কী হবে?
আপনি যদি মনে করেন ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা বা জুমের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়ন খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তবে মনে রাখবেন আপনি কেবল একা নন। সামাজিক বন্ধন নিয়ে অধ্যয়নরত সুইডেনের লিংকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জুলিয়া সুভিলেহতো বলেন, আপনাকে আরো অনেক কিছুই মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, যেগুলো আগে আপনি সাধারণ স্পর্শের মাধ্যমে করতেন। সান্ত্বনা দিতে জড়িয়ে ধরা বা কাঁধে হাত রাখা প্রায়ই সম্পর্ককে আরো সহজ ও প্রাকৃতিক করে তোলে। তবে এগুলো মৌখিক যোগাযোগে রূপান্তর করতে বাধ্য করার ফলে এটা আমাদের আরো ভালো যোগাযোগকারীতে পরিণত করবে। এটার আরেকটি বিকল্প হলো আবেগপূর্ণ কথা বলা বন্ধ করে দেয়া।
ক্যালিফোর্নিয়ার ইউসিএলএ ম্যাটেল চিলড্রেন হাসপাতালের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ স্কলানস্কি বহু বছর ধরে হাত মেলানোর পরিবর্তে মৌখিক যোগাযোগ ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, মানুষ যখন হাত বাড়িয়ে দেয়, আমি কেবল বলি, শোন, আমি হাত মেলাতে চাই না। আমি মনে করি বিভিন্ন কারণেই এটা ভালো ধারণা। আমি হাত মেলানোর পরিবর্তে জোড় হাতের অঙ্গভঙ্গি বেছে নিই। মানুষজন হাসে এবং ভাবে এটা একধরনের মজার কাজ। তবে আমি মনে করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নতুন বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে।
টাইম ম্যাগাজিন।।