পেটে আগুন আকাশে বৃষ্টি সন্তান ও পরিবার-পরিজনের চোখে জল নিয়ে তিন মাসের বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে ফরিদপুর চিনিকলে বিক্ষোভ সমাবেশে করেন শ্রমজীবী ইউনিয়ন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতায় দেশের ১৫ টি চিনিকলের সাথে ফরিদপুর চিনিকলের শ্রমিক,কর্মচারী,কর্মকর্তারা তিন মাসের বেতন-ভাতা না পাওয়ার কারনে আর্থিক সংকটে ভুগছে। আর সেই সাথে চলছে মানবেতর জীবনযাপন। বেতন ভাতা ও অন্যান্য পাওনার দাবিতে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় ফরিদপুর চিনিকলের প্রধান ফটকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী ইউনিয়নের সভাপতি শাহ মো. হারুন অর রশিদ, সাধারন সম্পাদক কাজল বসু, আখ চাষী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা সুভাষ রায়, শ্রমজীবী ইউনিয়নের সহ সভাপতি মনিরুল ইসলাম, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আব্দুল বারীক , এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মুক্তার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিন্টু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মন্টু , সাবেক সহ-সভাপতি আবুল বাশার বাদশা, মোঃ উজ্জল শেখ , ফরিদপুর চিনিকল সিডিএ সংসদের সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা বিপ্লব দে ,মোঃ আব্বাস আলী বিশ্বাস, ,মোঃ আমিরুল সেখ, মোঃ রকি বিশ্বাস সুভাষ কর মোঃ রিপন শেখ প্রমুখ। জানা যায়, এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৩০ লক্ষ লোক রয়েছে। আখচাষী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী,কর্মরত শ্রমিক,কর্মচারী,কর্মকর্তাসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টসকলকেই হা-হুতাশায় ভুগতে দেখা যায়। কারন হিসেবে জানা যায়, সময়মত আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ না করা, কর্মরতদের সময়মত বেতন-ভাতা না পাওয়া, সময়মত চিনি বাজার ধরে না রাখা ইত্যাদি। বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারনে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীল না থাকায় এক দিকে যেমন সমস্যা অন্যদিকে দোকান হতে দীর্ঘদিন বাকিতে নিত্যপণ্য ক্রয় করে ভোগ করে মোটা অংকের দেনা হয়েছে। এ অবস্থায় নিত্যপণ্যের বাজার করতে পারছে না চিনিশিল্পে কর্মরতরা। চিনিকলে কর্মরত প্রায় ৮ শত শ্রমিক কর্মচারীবৃন্দ ফেব্রুয়ারী,মার্চ ও চলতি এপ্রিল মাসের বেতন না পেয়ে আর্থিক সংকটে দিন অতিবাহিত করছে। ঠিকমত নিত্যপণ্যের বাজার না করতে পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইতিমধ্যে চিনিকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেনের নেতৃবৃন্দ বেতন পাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সামাজিক মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেছে। ফরিদপুর চিনিকলে আখচাষীদের আখের মূল্য বাবদ প্রায় ৩ কোটি টাকা টাকা পাওনা রয়েছে এবং স্থায়ী ও মৌসুমী এবং দৈনিক ভিত্তিতে(ম্যান-ডে) কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৫ কোটি, অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি বাবদ প্রায় ১৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এদিকে আখের মূল্য সময়মত না পেয়ে আখচাষীরা আখের আবাদ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে হচ্ছে। এমনিতে আখ দীর্ঘ মেয়াদী কৃষি ফসল। জমিতে দীর্ঘদিন রাখতে হয়। এর পর আখ মিলে সরবরাহ করার দীর্ঘ সময় পরে যদি আখের টাকা পায় তাহলে ঐসব আখচাষীদের আর ধৈর্য্যর সীমা থাকে না। আর এ কারনে আখ চাষ ক্রমান্ময়ে হ্রাস পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেতন ভাতার বিষয়ে ফরিদপুর চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরারর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা মনোয়ার জানান, শ্রমজীবী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক হতে প্রাপ্ত স্মারক লিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবার প্রেরণ করা হয়েছে। চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও ফরিদপুর চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক কাজল বসু জানান, বেতন-ভাতা না পেয়ে আর্থিক সংকটের কারনে শ্রমিক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানবতার নেত্রী ও শিল্পবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট মানবিক আবেদন জানিয়ে বলেন, এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক কর্মচারীদের সকল বকেয়া বেতন-ভাতা, আখচাষীদের আখের মূল্য পরিশোধ ও অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ পাওনা টাকা পরিশোধ এর বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসময় শ্রমিক কর্মচারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আহাজারি করেন । ফরিদপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল বারী জানান, এ মিলের কর্মরতদের বেতন না পাওয়ার কারনে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে। বেতন-ভাতার বিষয়ে সদরদপ্তরে জানানো হয়েছে। চিনি বিক্রি করে বেতনভাতা দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। চিনি বিক্রি হলে খুব দ্রুতই বেতন ভাতা ও আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারী এ চিনিশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শিল্পবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে সচেতন এলাকাবাসী।