• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
সালথায় উত্তেজিত জনতার তান্ডব ও অগ্নিসংযোগ, নিহত-১ পুলিশসহ আহত ৩০

মনির মোল্যা, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:

পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও থানায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে স্থানীয় উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা। তান্ডব চলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পুর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় তিনটি মোটর সাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এই তান্ডব চালানো হয়। মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলাকারিরা তিনঘন্টা ব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের এই হামলায় রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জুবায়ের হোসেন (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। ৮পুলিশ-র‌্যাব সদস্যসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। নিহত জুবায়ের উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের আশরাফ আলী মোল্যার ছেলে।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এ সময় সহকারী কমিশনারের গাড়ি থেকে নেমে কয়েক ব্যক্তি বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। এতে পাশ্ববর্তী নটাখোলা গ্রামের মো. জাকির হোসেন মোল্যাসহ কয়েকজন আহত হয়। জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হন। খবর পেয়ে সেখানে সালথা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গুলিতে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা অভিমুখে রওনা হয়ে থানা ঘেরাও করে। পরে একে একে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিস, স্থাপনা ও বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় ইউএনওর গাড়ি ও এসিল্যান্ডের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

তবে এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানা খান হিরামণি বলেন, তিনি রুটিন ওয়ার্কে বিভিন্ন বাজারে গিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে ফুকরা বাজারে যান। সেখানে দুটি দোকান খোলা ছিল, তাদের বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। পেটানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, সহকারী কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফুকরা বাজারে পুলিশ পৌঁছায়। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, আমার বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা পুলিশের পাশা-পাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ সদস্যসহ র‌্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২ টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে । এ সময় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্য আহত হন। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের সনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।