• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী দাপিয়ে বেড়ানো নেতারা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশ ও মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় দৃঢ় প্রত্যয়ের সূর্যদয় একটি ঐহ্যিবাহী রাজনৈতিক দলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। চেতনা, আত্মবিশ্বাস আর অনুভূতির বিস্তৃত সবুজ-শ্যামল বৃক্ষের নাম আওয়ামী লীগ।

স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন আকাঙ্খায় পাদ ভূমি এই আওয়ামী লীগ। সেই দলের নানা ঐতিহ্যে গৌরবময় অধ্যায় রয়েছে ফরিদপুর জেলায়। গত ১৫ বছর সেই ঐতিহ্যকে পাশ কাঁটিয়ে সুচতুরভাবে ছদ্মবেশে প্রবেশ করে জামায়াত-বিএনপি’র প্রেতাত্মারা। রাজনৈতিক দখল, দাম্ভিকতায় নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে সকল কিছুর অভিভাবক হতে চান সাবেক মন্ত্রীর ভাই বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। তিনি দীর্ঘদিন থানা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বিশ্বস্ত আস্থাভাজন ছিলেন। ফরিদপুর যখন উন্নয়নের ধারায় ভাগ্য বদলের সংগ্রামে জেঁগে উঠছিল অবিরাম। সাবেক মন্ত্রী বর্তমান সাংসদ ইঞ্জিঃ খন্দকার মোশারফ হোসেন এম.পি. দক্ষতা আর কর্ম বিরত্বে ফরিদপুর জেলার রূপ যখন আলোর বাতিঘরে পরিণত হচ্ছিল। তখন তার ভাই হবার সুবাদে রাজনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, কুটনৈতিক সকল কিছুর কেন্দ্র হয়ে উঠেন বাবর। কয়েক বছর পদ খুব দাপটের সাথে থাকেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যর্থ হন এই বাবর। কোটি, কোটি টাকার রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে ছেয়ে ফেলে শহর। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে ঐতিহাসিক অম্বিকা হল মাঠে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে আসেন তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহাবুবুল আলম হানিফসহ অনেকে।

সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয় আর বলা হয় এই সম্মেলনে শুধুমাত্র জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোন শ্লোগান চলবে না। সেদিন তৃণমূল নেতাকর্মীদের ইচ্ছের অভিনন্দন জানাবার প্রত্যয় জাগ্রত হলেও ভয়ে কেউ অভিনন্দন জানাতে পারেনি। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেনের বাসায় গিয়ে তাকে ফুলেল অভিনন্দন জানানোর পর অনেক নেতাকর্মীকেই রাজনৈতিক ক্ষোভের শোষণের শিকার হতে হয়েছে। শুরু হয় ফরিদপুরের অন্য এক ঘৃণ্য রাজনীতি। নেত্রীর দেয়া নেতৃত্বের নেতার কাছে দলীয় নেতাকর্মীরা যেতে সাহস পায় না। এই জন্য যে, সেখানে গেলে হাতুরি বাহিনীর নৃসংশ হামলার শিকার হতে হয়। কারণে, অকারণে মিথ্যে মামলার শিকার হয়ে জেল হাজতে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৫নং অভিযুক্ত আসামী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ বদিউজ্জামান বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক দীপক মজুমদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক শওকত আলী জাহিদ, তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরসহ অসংখ্যজন নির্মম সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। বাবর এর হাত ধরেই রাতারাতি আওয়ামী লীগে এসে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হন থানা বিএনপি’র তৎকালীন সভাপতি, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেকুজ্জামান মিলন পাল। থানা বিএনপি’র সহ-সভাপতি, বর্তমান অম্বিকাপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সাইদ চৌধুরী বারী। আলীয়াবাদ বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বর্তমান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম ওমর ফারুক ডাবলু। জেলা বিএনপি’র তৎকালীণ তাতী বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আজমল হোসেন খান (ছোট আজম)। তৎকালীন বিএনপি নেতা মরহুম খন্দকার চাঁদ-এর বিশ্বস্তজন ও ক্যাডার বলে পরিচিত বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন বরকত ওরফে বরকত মন্ডল ওরফে চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাব থেকে অব্যাহতি পাওয়া ইমতিয়াজ হাসান রুবেল।

রুবেল-বরকতের ভাগ্নে বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল হারুন। একসময় জাসদ ও জাতীয় পার্টি করা বর্তমান ডিক্রিরচর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু। এক সময়ের ইয়াছিন কলেজ ছাত্রদলের নেতা বর্তমান ডিক্রিরচর আওয়ামী লীগের নেতা খায়রুজ্জামান। একসময়ের জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সমপাদক জিয়ার রহমান বিপ্লব ওরফে রবিনহুড বিপ্লব বর্তমান শহর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক। জেলা বিএনপি’র সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সদ্য আওয়ামী লীগে আসা নাফিজুল হাসান তাপস। পদ না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে শ্রমিক লীগ ও থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক বলে দাপিয়ে বেড়ানো বর্তমানে দুর্নীতি’র দায়ে জেল হাজতে রয়েছেন মোঃ বিল্লাল হোসেন ওরফে দাতাল বিল্লাল।

রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের জেলা রুকন সদস্য তার পিতা-মাতা তারপরও সে বর্তমানে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন। একসময় জাতীয় পার্টি’র যুব সংহতির নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে শহর যুবলীগের নেতা, জেলা যুবলীগের আহবায়ক এএইচএম ফুয়াদের আশীর্বাদপুষ্ট চৌধুরী মোঃ হাসান। শহরের গোয়ালচামট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা বিএনপি থেকে আসা খালেক প্রামানিক। কানাইপুরে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এক সময়ের বিএনপি’র দাপুটে নেতা মফিজউদ্দিন মেম্বার। বিএনপি থেকে আসা মোতালেব বিশ্বাসসহ অসংখ্যা নেতাকর্মী রয়েছে। যারা আওয়ামী লীগে এসে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরী করে দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের দ্বিধাবিভক্তে ফেলে সরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দখল করে। ব্যবসা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল ধরনের লুণ্ঠনে রাতারাতি হয়ে পড়েন শত কোটি, হাজার কোটি টাকার মালিক।

অথচ দলীয় অনেক নেতাকর্মী বিনা চিকিৎসায় দারিদ্রতায় চরম কষ্টে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে দুর্বিসহ যন্ত্রণা নিয়ে বাস করছেন। অপমান, লাঞ্ছনার ইতিহাস লিখে শেষ করার না। অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতাদের মধ্যে বহিস্কৃত আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন: শেখ মাহাতাব আলী মেথু বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয়পার্টি, পিডিপি। খন্দকার শাহিন আহম্মেদ বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। জাহাঙ্গীর খান বাবু বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। আব্দুল খালেক বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। আকবর হোসেন বর্তমানে শহর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। কাইয়ুম মিয়া বর্তমানে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। গোলাম নবী আজাদ বর্তমানে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। আব্দুল হালিম মিয়া বর্তমানে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য, পূর্বের রাজনৈতিক দল বিএনপি। ফরিদপুর আওয়ামী লীগ-কে সময়ে, অসময়ে দ্বিধাবিভক্তির মাত্রায় নিয়ে গেছেন যারা তারা আওয়ামী লীগের বন্ধু নয়।

ফরিদপুরে বর্তমানে দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান চলছে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত অভিভাদন ও ধন্যবাদ জানিয়েছে সফল রাষ্ট্র নায়ক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। আগামী কোন একদিন দ্বিতীয় পর্বে ফরিদপুরের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দীর্ঘশ্বাস আর লাঞ্ছনা, বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরবো। অজ্ঞাতভাবে যদি কারো মনে কোন দুঃখ দিয়ে থাকি ক্ষমা করবেন। আর যদি রাজনৈতিক অপশক্তি আর স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাকে হত্যা করে আপনারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আর কারও কাছে কোন তথ্য থাকলে আমাকে দিয়ে সাহায্য করবেন।

লেখকঃ কলামিস্ট ও সংবাদকর্মী বিজয় পোদ্দার

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।