জামালপুরের বকশীগঞ্জে গত বছরের মত এবারও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বিক্ষিপ্ত বর্ষণে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বৃষ্টির কারণে এসব কৃষক গো-খাদ্যের জন্য খড় শুকাতে না পারায় সংরক্ষণ করতে পারছেন না। ফলে আগামি দিনে গো-খাদ্যের সঙ্কট নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে।
এদিকে এতো কিছুর পরও বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন দুর্যোগ প্রবন নিম্নাঞ্চল ও নদী পাড়ের মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর মে থেকে আগষ্ট মাস এর মাঝামাঝি সময়ে বকশীগঞ্জ উপজেলায় প্রবল বন্যা দেখা দেয়। বন্যার কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখি হয়ে পড়ে। প্রতিকূল পরিস্হিতিতে এ এলাকার মানুষকে বরাবরই বন্যা সহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। অনেক সময় অসময়েও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এ এলাকায়। এ কারণে কৃষকের ব্যাপক- ক্ষতি হয়। তবে প্রকৃতির সাথে চলতে চলতে তারা অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন জানান দুর্যোগ প্রবন এলাকার মানুষ।
বকশীগঞ্জ উপজেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী বেষ্টিত বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে এবার উল্টো চিত্র। এবার এসব এলাকার মানুষ তাদের চিন্তা ধারা বদলে ফেলেছেন। বন্যা মোকাবেলায় ব্যক্তিগত ভাবেই তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
আবার বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্হার সহযোগিতায় তারা বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছেন।
গত বছরের ভয়াবহ বন্যার পর মানুষের মধ্যে সক্ষমতা অনুযায়ী সচেতনতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। মেরুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে নিজেদের অর্থায়নে বন্যা মোকাবেলায় ভিটা উচুঁকরণ করা হয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মেরুরচর, সাধুরপাড়া,বগারচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের কয়েক শ পরিবার গত ১০ মাসে তাদের বাড়ির ভিটা উচুঁ করেছেন। নিজ উদ্যোগ এবং বেসরকারি সংস্হা ইএসডিও’র সৌহার্দ্য-৩ কর্মসূচির উদ্যোগে ২৫২ টি হতদরিদ্র পরিবারকে ভিটা উচুঁ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং মানুষের অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন সংঘ রি-কল ২০২১ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে এই এলাকায় দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সহ দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন এবং নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন উন্নয়ন সংঘের রি-কল ২০২১ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে দুর্যোগ পরিস্হিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বন্যার সময় খাদ্য সঙ্কট দূর করতে ফুড ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। এই ফুড ব্যাংক বন্যার সময় খাদ্য সমস্যা দূর করতে অনেকটাই ভূমিকা রাখেন। আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই প্রকল্প মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গ্রাম ভিত্তিক সংগঠনের (সিবিও) মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন ভাবেই বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন নদী পাড় ও নিম্নাঞ্চলের মানুষগুলো। তারা ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট নৌকা বানানো, ভাসমান চুলা তৈরি করা, শুকনো খাবার তৈরি করে রাখছেন।
অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগেও বন্যার সময় পর্যবেক্ষণ,বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও ত্রাণ কার্য সম্পন্ন করার জন্য নৌকা তৈরি করছেন। বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আল বাবু একটি বড় নৌকা তৈরি করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে কথা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাসান মাহবুব খান জানান, গত বছরের বন্যার সময় একটি নৌকা প্রস্তত করা আছে। সেটি এবারও ব্যবহার করা হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
নদী ভাঙন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য একটি তালিকা তৈরি জন্য চেয়ারম্যানদের শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর সহযোগিতায় একটি প্রতিবন্ধী বান্ধব নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। বন্যার সময় যেন সহজেই প্রতিবন্ধীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে তাদের সরানো যায়। বন্যার প্রকোপ শুরু হলেই সেটি হস্তান্ত্রর করবে দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর।