করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি উড়ানোর চিত্র চোখে পড়ার মত
করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ।তাই বিকেল হলেই বিভিন্ন পাড়া -মহল্লায় ছেলে বুড়ো সকলের ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখে ভালই লাগছে। নিজের অজান্তেই মন চলে যাচ্ছে সেই শৈশবে। বাংলার বিখ্যাত কবি সুফিয়া কামালের ‘আজিকার শিশু’ কবিতার দুই পঙ্কিত, আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি/ তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি। সত্যি তাই আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর কথায় যেনো ভুলে গিয়েছিলো। শহুরের যান্ত্রিক জীবনে শিশুদেরও যেনো যন্ত্রের সঙ্গে বসবাস। টিভি, মোবাইল ফোন, ভিডিও গেম। আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন শিশুদের হাতে উঠে এসেছে রিমোর্টচালিত কলের জাহাজ।
তবে এ করোনাকালিন সময়ে শিশুদের সময়চক্র যে কবি সুফিয়া কামালের শৈশবের সময়ে ফিরে গেছে। লকডাউনের কারণে ঘর থেকে বেরুতে মানা। আর তাই তো ঘুড়ির সময় এসেছে আবার ফিরে। বিকেল হলেই রাজশাহী মহানগরীর ছাদগুলোতে উঠে আসে শিশুর দল ঘর ছেড়ে। হাতে লাইট নিয়ে উড়ায় ঘুড়ি আকাশে। খোলা আকাশে উড়তে দেখা যায় নানান রঙের ঘুড়ি। হর গ্রাম,মহিষবাথান,রাজপাড়া,লক্ষ্ মীপুর,ভাটাপারা,সিপাইপারা,দরগাপাড়া,মাস্টারপাড়া,ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায় ছেলে মানুষ সহ বড় দেরও ঘুড়ি উড়ানোর চিত্র চোখে পড়ার মত।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ৭ বছরের ছেলে মেহেরাব তাহমিদ স্পর্শ। সবেমাত্র কেজিতে লেখাপড়া করছে। কিছুদিন আগে বাবার কাছে বায়না ধরে ঘুড়ি কিনেছিলেন। এখন বিকেল হলেই বায়না ছাদে যাবে। ইতোমধ্যে তার সংগ্রহে কয়েক ধরনের ঘুড়ি।
মেহেরাব তাহমিদ স্পর্শ জানায়, ঘুড়ি উড়ানো বেশ মজার। করোনার জন্য এখন ছাদে উড়াচ্ছি। পরে মাঠে গিয়ে উড়াবো।
স্পর্শকে কখনো তার বাবা সাইফুল ইসলাম না হয় বড় বোন সাদিয়া ইসলাম ঘুড়ি উড়াতে সহযোগিতা করে। যান্ত্রিক সময়ে এমন খেলনা পেয়ে স্পর্শ বেশ খুশি।
স্পর্শের মতো রাজশাহী মহানগরীর বেশিরভাগ শিশুরা এখন ঘুড়ি উড়ায় আকাশে। শুধু ছাদে না বিকেল হলেই মাঠেও ভিড় করছে শিশুরা। ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যে যার মনের মতো ঘুড়ি উড়াচ্ছে। এক সময় পেশা বদল করা ঘুড়ি তৈরি কারিগররাও যে ফিরে পেয়েছে প্রাণ।
নওদাপাড়া এলাকার ঘুড়ি তৈরি করেন বৃদ্ধ জমশেদ আলী। তিনি জানান, এক সময় এ ঘুড়ি তৈরি করেই তাদের সংসার চলেছে। নানান রঙের ঘুড়ি তৈরি করতে বেশ মজাই লাগতো। একটা সময় এসে ঘুড়ির যুগ শেষ হয়ে যায়। মনের কষ্টে রিকশার হ্যান্ডেল হাতে ধরতে হয়।
সামান্য হেসে জমশেদ আলী বলেন, গেল দুই সপ্তাহ ধরে আমি ঘুড়ি বানাচ্ছি। সামান্যকটা দিনের জন্য হলেও পুরানো কাজে ফিরে যেতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।