• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
গলাচিপায় প্রতিবন্ধি স্বামী-স্ত্রীর মানবেতর জীবন যাপন

তারিখঃ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১,সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালীর গলাচিপায় শারীরিক প্রতিবন্ধি স্বামীকে নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি স্ত্রীর মানবেতর জীবন যাপন। চোখের আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে বলিয়ান হয়ে জীবন যুদ্ধে নেমেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি গৃহবধু নিপা রানী (২৫)। নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলেও হাল ছাড়েন নি সংসারের। শারীরিক প্রতিবন্ধি স্বামী নিমাই চন্দ্র দাস (৪০) ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে তার জীবন সংগ্রাম। অভাব অনটন কুরে কুরে খেলেও আজো তার কপালে জোটেনি সরকারি কোন সহযোগিতা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বাবলম্বীদের খোঁজ খবর রাখলেও এ প্রতিবন্ধি পরিবারের কোন খোঁজ রাখেন না তারা। গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শারীরিক প্রতিবন্ধি নিমাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধি নিপা রানী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, বৃদ্ধ বাবা ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধি নিমাইয়ের পাঁচ জনের সংসার। স্ত্রী নিপা রানীর চোখের আলো না থাকলেও মনের আলোয় পথ চলা শুরু করে সে। স্বামী নিমাই দাসকে কাজে পাঠিয়ে আবার সাথে করে নিয়ে আসে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় নিমাইকে কেউ দেয় না কোন কাজ। তাই তো তিনি রাস্তায় রাস্তায় হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন চকলেট। চকলেট বিক্রির লাভের টাকায় সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সারাদিনের কর্ম শেষে নিমাইয়ের যখন বাড়িতে থাকার জায়গা নেই, তখন থাকতে হয় পরের ঘরে। বৃদ্ধ বাবা-মা ও শিশু সন্তানকে নিয়ে সবখানেই যেন হতাশা আর হতাশা। শুরু হয় তাদের অভিশপ্ত জীবন সংগ্রাম। তবুও হাল ছাড়েনি ওই প্রতিবন্ধি পরিবার। ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সংসার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন তারা। নিজের হাতে সংসারের সব কাজ করতে হয় ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি গৃহবধূকে। রান্না-বান্না, সন্তানদের গোসল করানো, খাওয়ানো ছাড়াও সংসারের সব কাজই করেন তিনি নিপুণ হাতে। স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রতিবন্ধি হওয়ায় কোন আয়ের উৎস না থাকায় তাদের মাথা গোজার ঠাঁইও ছিল না। তবুও এগিয়ে যাবার স্বপ্ন তাদের। সংসারের হালধরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নিপা রানী জানায়, পরিবারের সকলকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগীতার ছিটে ফোটাও পান নি। সরকারি সহযোগীতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। প্রতিবেশি জোৎস্না রানী জানান, নিপা রানী নিজে অন্ধ হয়ে গোটা সংসারটি যেভাবে টিকিয়ে রেখেছে তা একজন স্বচ্ছল মেয়ের পক্ষে সম্ভব না। অনেকের সংসারে ছোট-খাটো মতবিরোধ ও অভাব থাকলেও নিপা রানীর সংসারে আছে গভীর ভালবাসা। অপর প্রতিবেশি তপন দাস জানান, করোনা ভাইসারে দুযোর্গকালীণ মুহূর্তেও তাদেরকে কেউ সহযোগিতা করেনি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত তারা টিকে আছে। তবে তাদের মত একটি পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেবার দাবি এ প্রতিবেশির।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হিরণ শীল জানান, এ বছর তিনি নিমাই চন্দ্র দাসকে একটি প্রতিবন্ধি কার্ড করে দিয়েছি। তাকে একটি সরকারিভাবে ঘর দেয়া হলে পরিবারটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেত। কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক মো. মাইনুল সিকদার বলেন, নিমাই চন্দ্র দাসের পরিবারটি প্রতিবন্ধি পরিবার। সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে পরিবারটি ভালো থাকবে। পরিবারটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর একান্ত প্রয়োজন। ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল চৌধুরী বলেন, আসলেই নিমাই চন্দ্র দাসের পরিবারটি অসহায়। প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর তাকে দেয়া একান্ত জরুরী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার জানান, নিমাই চন্দ্র দাসের দরখাস্ত পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।