আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক সাংবাদিককে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করতে পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের এক জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে মৃদু বাকবিতণ্ডার জের ধরে তরুণ ও মেধাবী সাংবাদিক মিয়া রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই নোংরা খেলায় মেতেছে ওই চক্রটি। এতে স্থানীয় সংবাদপত্র, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিয়া রাকিবুল ইসলাম বার্তা বাজার প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক গণমানুষের আওয়াজ ও ইংরেজি ডেইলি ট্রাইবুনাল পত্রিকার আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চত্বরে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নতুন গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত কয়েক সংবাদকর্মীর এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ক্লাবের সহ-সভাপতি, বীরমুক্তিযোদ্ধা খান আসাদুজ্জামান টুনু’র এক প্রশ্নের জবাবে প্রত্যুত্তর করেন ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মিয়া রাকিবুল ইসলাম। তার কথার সুরে কিছুটা হেঁয়ালি যুক্ত থাকায় এতে সংক্ষুব্ধ ও অসম্মানবোধ করেন খান আসাদুজ্জামান। পরবর্তীতে প্রেসক্লাবের এক সভায় মিয়া রাকিবুল এ ঘটনায় জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি বিবেচনা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সহ-সভাপতি খান আসাদুজ্জামান প্রার্থনা মঞ্জুর করলেও নির্বাহী কমিটির একটি অংশ রাকিবুলের ক্লাব সদস্য পদ সাময়িক বা তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।
আর এ ইস্যুটিকে পুঁজি করেই রাকিবুলের বিরুদ্ধে মাঠে নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী। তারা রাকিবুলের ভাবমূর্তি নস্যাৎ এবং তাকে বেকায়দায় ফেলতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারণাসহ নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। চক্রের এক সদস্য তার নিজের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্টের শিরোনামে লেখেন, মুক্তিযোদ্ধাকে কটুক্তি করায় সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারের নাতিকে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার।
এরপর বিস্তারিত বর্ণনায় গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের উদ্ধৃতি টেনে সাংবাদিক রাকিবুলকে চাঁদাবাজ, বেয়াদব বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক, নিন্দনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে। এ প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে উপরে বিবৃত বক্তব্যগুলোর কোনটিরই কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের ভুক্তভোগী সহ-সভাপতি খান আসাদুজ্জামান টুনুসহ একাধিক সদস্য, স্থানীয় একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি, এমনকি আলোচ্য ওই সংবাদটিতে যাদের বক্তব্য স্থান পেয়েছে তাদের সঙ্গেও কথা বলেন এ প্রতিবেদক।
জানতে পারেন, ঘটনার দিন মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন আলাপ-আলোচনাই হয়নি। কথা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা বনাম অমুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও। কথাবার্তা যেটুকু হয়েছে তা হলো প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি বনাম দপ্তর সম্পাদক হিসাবে ক্লাবের গঠনতন্ত্র নিয়ে। অতএব এখানে মুক্তিযোদ্ধাকে কটুক্তির বিষয়টি একেবারেই অবান্তর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানিমূলক।
স্বয়ং ভুক্তভোগী বীরমুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক খান আসাদুজ্জামান টুনু নিজেও বলেছেন, জুনিয়র সাংবাদিক হিসাবে রাকিবুল আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সে কোন কটাক্ষ করেনি। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলেও ক্লাবের কিছু সদস্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করেছেন।
মিয়া রাকিবুল সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারের নাতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তার জন্মস্থান জাটিগ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম সরদার, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো. আয়ুব হোসেন মিয়া বলেন, সাজাপ্রাপ্ততো দূরের কথা সাধারণ রাজাকারের তালিকায়ও রাকিবুলের দাদা মুন্নু মিয়ার নাম আছে বলে আমরা কখনো শুনিওনি এবং দেখিওনি। মুন্নু মিয়া গ্রামের স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন। মানুষের উপকার করা ছাড়া কারো ক্ষতির কথা তিনি কখনো চিন্তাও করেননি। মুন্নু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও এর বিরোধিতা তিনি কখনো করেননি।
ওই এলাকার রবীন্দ্রনাথ দাস নামে এক প্রবীণ চিকিৎসক জানান, রাকিবুলের দাদা একজন ভালো মানুষ ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে হিন্দুদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের বিতর্কিত ওই সংবাদটিতে বক্তব্য প্রদানকারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আলফাডাঙ্গায় রাজাকারের যে তালিকা রয়েছে সেখানে মুন্নু মিয়ার কোন নাম নেই। তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন কি-না তাও আমার জানা নেই। মৃত মানুষ নিয়ে এমন নিন্দা-মন্দ করা অন্যায়। মুন্নু মিয়া রাজাকার ছিলেন মর্মে আমার এমন বক্তব্য যদি কোথাও প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে সেটি সঠিক নয়। কেউ বিকৃত ভাবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। এটা সুস্থ সাংবাদিকতার পরিপন্থী কাজ বলে আমি মনে করি।
মিয়া রাকিবুলের সদস্যপদ স্থগিত, তাকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর বলেন, মিয়া রাকিবুল ইসলাম একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক ও ভালো ছেলে। সে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের অপরাজনীতির শিকার। প্রেসক্লাবের আসন্ন নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখতে সদস্যপদ স্থগিতের এই অপকৌশল। সেদিন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতির সঙ্গে যা ঘটেছিল তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার শাস্তিই যথেষ্ট ছিল। কারণ আমি ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলাম। রাকিবুল কোন কটুক্তি বা আপত্তিকর কোন কথা বলেননি। এর জন্য তার সদস্যপদ স্থগিত অতিবাড়াবাড়ি ও বিদ্বেষপ্রসূত সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
আলমগীর কবীর আরো বলেন, রাকিবুলের সম্মানহানি করতে যারা তাকে রাজাকারের নাতি, চাঁদাবাজ, বেয়াদব বলে গালাগাল এবং ক্লাব থেকে বহিষ্কারের কথা বলে মিথ্যাচার করছেন তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই এটি করছেন। এর কোন সত্যতা নেই। আলফাডাঙ্গার মাটিতে ওই গোষ্ঠীটিই প্রকৃত হলুদ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত।
আলমগীর বলেন, স্থগিত আর বহিষ্কারের পার্থক্য যারা বুঝেনা তারা অবশ্যই নির্বোধদের শামিল। রাকিবুলের সদস্য পদ স্থগিত ও প্রেসক্লাবের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে তিনি সহ আরো চার সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানান আলমগীর কবীর।
অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের শিকার মিয়া রাকিবুল ইসলাম এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় অন্যায় ভাবে আমার সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে। আবার একটি মহল এটিকে বহিষ্কার হিসাবে প্রচার করছে। স্থগিত আর বহিষ্কার এক জিনিস নয় এটা তাদের বুঝা উচিৎ। তিনি বলেন, ওই মহলটিই ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার গায়ে রাজাকারের তকমা লাগিয়ে আমাকে দাবিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা কোন দিনই সফল হবেনা।