ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন ৮জন। যা গত শুক্রবার রাতে পৌরসদরের বিলাসী শপিং কমপ্লেক্সে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভায় প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় কমপক্ষে জনপ্রিয় তিনজন দলীয় প্রার্থীর নাম জেলা আওয়ামী মাধ্যমে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আটজনের মধ্যে জনসমর্থণ আছে এমন প্রার্থীদের বাদ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন নিজের আপন দুই সহোদরসহ একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির কাছে। যেখানে জনপ্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরো কয়েকজন রয়েছেন। তাদের নাম বাদ দিয়ে দলীয় প্রার্থী তালিকায় গত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা হাসানুজ্জামান মিয়া মুকুল ও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন হোসেন সাফু’র নাম পাঠানো হয়েছে। মোজাফফর হোসেন ও হাসানুজ্জামান মিয়া মুকুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেনের আপন দুই ছোটভাই।
এ কারণে তৃণমূলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে আপন দুইভাই ও অপরিচিত ছায়া প্রার্থীর নাম প্রেরণের গুঞ্জনে এলাকায় নেতাকর্মীসহ জনসাধারণরা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আ’লীগের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা।
প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরো যারা রয়েছেন তারা হলেন, বোয়ালমারীর গর্ভনর খ্যাত মরহুম আব্দুল হামিদ বাবু মিয়ার বড়ছেলে বোয়ালমারী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা লিপন মিয়া, জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. লিটন মৃধা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা বিমান রায়, যুবলীগ নেতা মো. মাসুদুর রহমান এবং উপজেলা গ্রাম ডাক্তার সমিতির সভাপতি ডা. সোলায়মান মোল্যা।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা হলো আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী দলের মনোনয়ন পাবেন না। এর মধ্য দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে যারা নৌকা প্রতীকের বিপরীতে সরাসরি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে তাদের বাদ দিয়ে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তাব করেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্যা।
বোয়ালমারী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতামত উপেক্ষা করে তিনজনের নাম গত রবিবার চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাঠানোর জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান মেয়র মোজাফফর হোসেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে তার নামও জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রেরনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাই তাকে নিয়ে বোয়ালমারীতে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
গতকাল সোমবার প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানোর ব্যাপারে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্যা মোবাইল ফোনে বলেন, শনিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান খসরুসহ চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনে আমরা চারজন বৈঠকে বসি। সেখানে আমি গত স্’ানীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করার প্রস্তাব করি। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান আমার সাথে একমত না হয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকা যোগ্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাদ দিয়ে তাদের ই”ছামত তালিকা প্রস্তুত করায় আমি সাদা কাগজে সই করে বৈঠক ছেড়ে চলে আসি।
বোয়ালমারী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান খসরু তালিকা প্রস্তুত প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কোন দাম নেই। তালিকা মুশা মিয়া প্রস্তুত করবেন। তিনি (মুশা মিয়া) বলেছেন, আপনারা কাগজে সই করে দিয়ে যান, যেটা ভাল বুঝি আমিই করব।
সোমবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সুবল চন্দ্র সাহা মোবাইল ফোনে বলেন, বোয়ালমারীতে মেয়র প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত নিয়ে আমাদের কাছে নানাবিধ অভিযোগ এসেছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। বাদপড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা বাদ পড়েছেন তারা আমাদের কাছে লিখিত আবেদন ও অভিযোগ জমা দিলে আমরা সেসব প্রার্থীদের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে পাঠিয়ে দিবো।