• ঢাকা
  • বুধবার, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
ফরিদপুর জেলা আ,লীগের ত্রি- বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে পদ-প্রত্যাশীদের দৌড় -ঝাপ

স্টাফ রিপোর্টার:-

আগামী ১২ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক  সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে পদপ্রত্যাশী নেতা কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, জেলার শীর্ষ দুটি পদে প্রধানমন্ত্রী যাদের মনোনীত করবেন তারাই দায়িত্বে আসবেন। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে তারা প্রধানমন্ত্রীর ‘গুডবুকে’ নাম লেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এক ডজনেরও বেশি পদপ্রত্যাশী এ ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন বলেও জানায় সূত্রটি।

জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার মহাসড়কে পদপ্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত বড় বড় বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে শহরের আনাচকানাচে, দেয়ালে।

চায়ের আড্ডা কিংবা চলতি পথের আলাপে

চায়ের আড্ডা কিংবা চলতি পথের আলাপেও জেলা আ. লীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। এ পর্যন্ত তৃণমূলে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ, জেলার বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল হক ভোলা মাস্টার, সহসভাপতি শামীম হক, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার ফারুক হোসেন, ফরিদপুরের আওয়ামী রাজনীতির অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাবেক সংসদ সদস্য ইমামউদ্দিন আহমেদের জ্যেষ্ঠ সন্তান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল আহাদ সেলিম, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ এমন মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া প্রমুখের নাম।

সাধারণ সম্পাদক পদে শোনা যাচ্ছে– বর্তমান কমিটির এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক বেগম ঝর্ণা হাসান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সামসুদ্দিন মোল্লার পুত্র কামরুজ্জামান কাফি, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অমিতাভ বোস, আওয়ামী লীগ নেতা মো. লিয়াকত হোসেন ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু।

এর বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অনিমেষ রায় এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদের নামেও বিলবোর্ড ও ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।

তৃণমূলের নেতা কর্মীরা বলছেন, বিপুল ঘোষ: বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার আট দিন আগে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপুল ঘোষ গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর কারাবন্দী ছিলেন। ৬ দফা আন্দোলনসহ ১১ দফা, আগড়তলা ষড়যন্ত্র বিরোধী আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।

পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে তিনি ১৭ বার গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ফরিদপুরে ফ্রিডম পার্টির সভা করতে এলে কর্নেল ফারুককে প্রতিহতে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। এবারের সম্মেলনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
হাইব্রিডদের অপসারণে বলিষ্ঠ সুবল চন্দ্র সাহা: অন্যদিকে, বর্তমান সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা একজন প্রবীণ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফরিদপুর ‘ল’ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগে জেঁকে বসা হাইব্রিডদের অপসারণে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। মোশাররফের অনুসারীরা তার বাড়িতে একাধিকবার হামলা চালায় বলে অভিযোগও আছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করেছেন বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা। তিনিও আলোচনায় রয়েছেন।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ: পাশাপাশি একজন কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যোগদানকারী হয়ে ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে তিনি অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও নৌকার প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জন্য মাঠে কাজ করেছেন। আবার বিএনপির এজেন্ট হয়ে দলে অনুপ্রবেশকারী বাবরের অপকর্ম ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে দল থেকে নিগৃহিত হয়েছিলেন। আবার শুদ্ধি অভিযানের পর তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। একজন নিপাট ভদ্রলোক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সকল মহলে প্রশংসিত।

ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে অগ্রণী শামীম হক: ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম হক বর্তমানে জেলায় আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি জেলার ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি। জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে তিনি কাজ করছেন। এবারের সম্মেলন আয়োজনে অর্থ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নজরকাড়া মঞ্চ তৈরি করেও তিনি আলোচনায় এসেছেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক: যুবলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও সফলতা দেখিয়েছেন। এলাকায় তারও শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে।

৪৫ বছর ধরে সক্রিয় এম এম মোশাররফ: আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে সক্রিয় রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এম মোশাররফ হোসেন। ৭৪ সালের বোয়ালমারী ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে সক্রিয় হন তিনি। তার পিতা ছিলেন এ উপজেলার সদরের ৩০ বছরের চেয়ারম্যান। তার পরিবারের সদস্য রয়েছেন বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বোয়ালমারী পৌর মেয়র। জেলায় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসাবে তার পরিচিতি রয়েছে।

শ্রমিক নেতার সহধর্মিণী ঝর্ণা হাসান: প্রয়াত রাজনীতিক হাসিবুল হাসান লাবলুর সহধর্মিণী বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসান সাধারণ সম্পাদক পদে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। গৃহবধূ থেকে স্বামীর মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে কাজ করছেন।

কামরুজ্জামান কাফি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক সাংসদ ও সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম প্রয়াত অ্যাডভোকেট সামসুদ্দিন মোল্যার সন্তান কামরুজ্জামান কাফিও সাধারণ সম্পাদক পদে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন। কামরুজ্জামান কাফি বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য। এর আগে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

পৌর মেয়র অমিতাভ বোস: ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোসও রয়েছেন আলোচনায়। থানা পর্যায় হতে রাজনীতি করে আসা অমিতাভ বোস জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। সর্বশেষ ফরিদপুর পৌর মেয়র পদে তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে মেয়র হন।

ফরিদপুরে একজন নির্বিবাদ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মো. লিয়াকত হোসেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও ছিলেন জেলা যুবলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তিনি।

ছাত্রলীগের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের কালচারাল উইংয়ের সঙ্গে নিবিষ্টভাবে জড়িয়ে ফরিদপুরের রাজনীতিতে একটি পরিচিত মুখ শওকত আলী জাহিদ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত।

দলের জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনের মাধ্যমেই দলের নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই শেষ কথা। আগামী বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের এ সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত রাখা। এ জন্য তৃণমূলে সময় দেন এবং দল পরিচালনায় সাংগঠনিকভাবে অভিজ্ঞরাই দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত হবেন বলে মনে করেন তারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, নেত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিশ্বাস করি স্বাধীনতার স্বপক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে যারা রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট, পরীক্ষিত- তারাই নেতা নির্বাচিত হবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ করতে চাই। দলের প্রতি যারা দীর্ঘ সময় আনুগত্য দেখিয়েছে তাদের দিয়েই কমিটি হবে। রুবেল-বরকতের মতো ব্যক্তিরা কোনোভাবেই নেতৃত্বে আসবেন না।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ মার্চ। ওই সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। এর এক বছর পর ৭১ সদস্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়। দেশ রুপান্তর

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।