• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ই জুন, ২০২৩ ইং
Mujib Borsho
Mujib Borsho
এলিয়েন প্রজাতি কি আরো করোনাভাইরাসের কারণ হবে?

ছবি প্রতিকী

বৈশ্বিক গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি ইনভ্যাসিভ এলিয়েন স্পেসিস (ক্ষতিকর অজানা প্রজাতি) দ্বারা নতুন ধরনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্কবার্তা প্রদান করেছে।

অজানা প্রজাতি—সেটা হতে পারে প্রাণী, গাছ এবং আণুবীক্ষণিক জীব—যেগুলো মানুষের দ্বারা এমন অঞ্চলে হাজির হয় যেখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় না। তারা নতুন এলাকায় মানুষের দ্বারা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা দুর্ঘটনাক্রমে জন্ম নেয়। অনেকে তাদের নতুন এ অবস্থানে এসে বিস্তারে সাফল্য লাভ করে। সে সঙ্গে পরিবেশ, মানব স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে।

দ্য ইনডিপেনডেন্টের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা বন্ধের ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন পত্রিকাটির মালিক ইভগেনি লেবেডেভ। তিনি ডাক দেন উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন বন্যপ্রাণীর বাজারগুলো বন্ধ করার জন্য এবং দাবি করেন ভবিষ্যতের মহামারীর ঝুঁকি কমাতে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে।

সম্প্রতি ছয়টি মহাদেশের ১৩টি দেশের গবেষকদের নিয়ে একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, অনেকগুলো ক্ষতিকর অজানা প্রজাতি দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী এ রকম ১৮ হাজার প্রজাতির তালিকা করা হয়েছে। এই গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে বায়োলজিক্যাল রিভিউজ জার্নালে।

বৈশ্বিক এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রফেসর লরা মেয়ারসন বলেন, এ সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, এগুলো হচ্ছে যা আমরা চিহ্নিত করেছি এবং রেকর্ড করেছি। কিন্তু এখানে এমন অনেক প্রজাতি রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেগুরো আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। সর্বাধিক নিশ্চিত সত্তা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক, যা অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, নতুন কোনো বিদেশী প্রজাতি যে সেখানে আছে তা দেখতে আমরা অনেক সময় নিয়েছি। কিছু কিছু আছে বিশাল জীববৈচিত্র্যের কারণে যাদের কোনো নামও নেই। আবার এমন কিছু প্রজাতি আছে, যা দেখতে স্থানীয় প্রজাতির মতো। কিন্তু আপনি যদি টেক্সোনোমিস্ট না হন, এর আবির্ভাব সম্পর্কে আপনি হয়তো জানতেও পারবেন না।

করোনাভাইরাসের এই মহামারী আমাদের সচেতন করেছে জুনোটিক রোগ সম্পর্কে। যা প্রাণীদেহ থেকে ভাইরাস মানবদেহে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনুসন্ধান অনুযায়ী, এই ক্ষতিকর প্রজাতিগুলো নতুন হোস্ট বা অঞ্চলে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার মতো ‘প্যাথোজেন পলুশন’ তথা জীবাণু দূষণের প্রধান উৎস।

সেই গবেষণা সতর্ক করে বলেছে, এই এলিয়েন প্যাথোজেনের প্রভাব সম্পর্কে খুব অল্পই জানা গেছে এবং এটি সম্মিলিত হয় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের আসন্ন সংক্রামক রোগের সঙ্গে।

প্রফেসর মেয়ারসন বলেন, আপনি যদি কোনো প্রাণী নিয়ে আসেন, সেটি হতে পারে অবৈধ বন্যপ্রাণী কেনাবেচার মাধ্যমে কিংবা পোষা প্রাণী হিসেবে। তখন এ সম্ভাবনা অনেক বেশি যে এটি কিছু রোগজীবাণু বহন করবে। যা হতে পারে জুনোটিক অথবা ছড়াতে পারে অন্য প্রাণীর মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, এটা কেবল প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণ এমন নয়। বরং প্রাণী থেকে প্রাণীতে সংক্রমণ বটে, যা বন্যপ্রাণী ও কৃষি উভয়ের জন্য সমস্যা। এটা মূলত গোটা বায়োসিকিউরিটির সঙ্গে যুক্ত সমস্যা।

গবেষণায় উল্লেখিত একটি উদাহরণ টাইগার মশা। এটি পরিচিত ডিজিজ ভেক্টর হিসেবে, এপিডেমিওলজির একটি টার্ম যেখানে সংক্রামক রোগজীবাণু বহন এবং ছড়ানো বোঝানো হয়।

২০১৯ সালে জিকা, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মতো রোগ বহনকারী মশা প্রথমবারের মতো দেখা গিয়েছিল ভারমন্টে (জনস্বাস্থ্য কর্তারা বলেছিলেন, যেসব মশা পাওয়া গেছে তা ভাইরাস বহন করে না এবং ভারমন্টের আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় তা সম্ভবত ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।)

জৈবিক আক্রমণগুলো মানুষের সুস্বাস্থ্যের ওপর বিস্তৃত প্রভাব ফেলে। পূর্ব আফ্রিকায় জলচক্রকে আক্রমণ করেছিল। যা ছড়িয়ে পড়েছিল ভিক্টোরিয়া হ্রদে। ফলে মাছ ধরা বন্ধ করতে হয়েছিল এবং স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

এ ধরনের আক্রমণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করে, যেমন বিষাক্ত মাছ পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জেলেদের আহত করেছিল। ২০১৭ সালের এক গবেষণা বলছে, এলিয়েন প্রজাতিগুলো বিশ্বব্যাপী এক-তৃতীয়াংশ প্রাণী এবং ২৫ শতাংশ উদ্ভিদের বিলুপ্তিতে অবদান রেখেছে। প্রতি বছর এই এলিয়েন প্রজাতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও ব্রাজিলে পরিবেশসংক্রান্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। আইসল্যান্ড এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলো মূলত এমন এলিয়েন আক্রমণের হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হয়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা হচ্ছে হাওয়াই দ্বীপ, নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার লেজার সুন্দা দ্বীপ।

ঘনবসতিপূর্ণ ধনী অঞ্চলগুলোতে নতুন প্রজাতি দ্রুত বিস্তৃত হয়, যা অনেক প্রতিষ্ঠিত অজানা ক্ষতিকর প্রজাতিকে সহায়তা করে। উদহারণস্বরূপ বলা যায় ফ্লোরিডার কথা। যা কিনা এলিয়েন প্রজাতির জন্য হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হয়।

অনেকগুলো উপায়ে এই ক্ষতিকর প্রজাতিগুলো গতিপ্রাপ্ত হয়। যেমন বিশ্ববাণিজ্য, ভ্রমণ ও জলবায়ু সংকট এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আবার কিছু প্রজাতি ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়াও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। যেমন শিকারের জন্য গেম অ্যানিমেল এবং স্পোর্ট ফিশ।

বিরল ও বহিরাগত পোষা প্রাণী পালনের যে উদ্দীপনা তাও একটি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইউরোপে আনুমানিক ৫৪ মিলিয়ন আলংকরিক পাখি, ২৮ মিলিয়ন ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ৯ মিলিয়ন সরীসৃপ পোষা প্রাণী হিসেবে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে হুমকি হিসেবে সামনে আসতে পারে।

এর বাইরে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া জীবন্ত প্রজাতি বহন করতে পারে পরজীবী অণুজীব। যার বেশির ভাগই অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেচাকেনা হয় এবং যাদের ট্র্যাক করাও বেশ কঠিন। আবার অন্য অনেক আক্রমণাত্মক প্রজাতি মালবাহী বিমান এবং কনটেইনারবাহী জাহাজে চড়ে আঘাত হেনেছিল। পাশাপাশি অনেক অঞ্চলে এসব আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য তেমন কোনো নজরদারি ও অর্থায়ন নেই। মেয়ারসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। যা ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরো প্রকট হওয়াকেই উৎসাহিত করছে।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

জুন ২০২৩
শনিরবিসোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্র
« মে  
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।