মনির মোল্যা, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দায় এবার পাটের ফলন ভাল হয়নি। আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন না কৃষকরা। এমন অবস্থায় পাটের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করছে পাটখড়ি। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার বাড়ায় ও ভাল দাম হওয়ায় পাটখড়ির সঠিক যত্ন নিতে ভুলছে না কৃষকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটখড়ির যত্ন নিতে কঠোর শ্রম দিচ্ছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। তাদের পরিশ্রমের দৃশ্য চোখে পড়ছে উভয় উপজেলার সর্বত্রই।
সোমবার ( ৯ সেপ্টেম্বর ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান প্রধান সড়ক ও গ্রামগঞ্জের রাস্তাগুলোর দুই পাশে এবং নদ-নদী আর খাল-বিলের পাড়ে সুন্দর করে আঁটি বেঁধে সাজিয়ে পাটখড়ি শুকিয়ে বিক্রয়ের উপযোগী করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, পানির অভাবে ও তীব্র খরায় পাটের ফলন অর্ধেকও হয়নি। তাই কৃষকরা পাট আবাদ করে যে ক্ষতি হয়েছে তা পাটখড়ি দিয়ে কিছুটা পোষাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। তবে শুকনা পাটখড়ির দামও পাচ্ছে ভাল। পাটখড়ির শুকানোর আগেই বিভিন্ন কার্বন ফ্যাক্টরির লোকজন এসে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনা পাটখড়ি নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাঁসি।
সালথার পাটচাষি জয়নাল শেখ ও নাসির মিয়া বলেন, এবার পাটের বীজ বপণের পর থেকে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তীব্র খরার কারণে স্যালোমেশিন দিয়ে গভীর নলকূপেও পানি পাওয় যাচ্ছিল না। যে কারণে পাটের গাছ বেশি বড় হয়নি। আঁশও ভাল হয়নি। ফলে প্রায় জমিতেই পাটের অর্ধেক ফলনও পাইনি। আবার বাজারে পাটের দামও কম। সব মিলিয়ে পাট আবাদ করে লোকসান হয়েছে। তবে পাটখড়ির দাম ভাল হওয়ায় কিছুটা পোষাতে পারছি।
তারা আরও বলেন, পাটের ফলন ভাল না হওয়ায় পাটখড়িও কম বের হয়েছে। প্রতিবিঘায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ আঁটি পাটখড়ি বের হয়েছে। সেগুলো শুকানোর পর প্রতিআঁটি পাটখড়ি ৬ থেকে ৭ টাকা দরে বিক্রি করছি। বিভিন্ন কার্বন ফ্যাক্টরির লোকজন বাড়িতে এসে পাটখড়ি কিনে যায়। এতে প্রতিবিঘা জমিতে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার পাটখড়ি বিক্রি করছি। ফলে পাটের ক্ষতি কিছুটা হলেও পাটখড়ি দিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছি আমরা।
নগরকান্দার পাটচাষি আবুল কালাম বলেন, দেশে অসংখ্য কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠায় পাটখড়ির চাহিদা বেড়েছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভাল। বাণিজ্যিকভাবে পাটখড়ির ব্যবহার বাড়ায় আমরা লাভবান হচ্ছি।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, গ্রামঞ্চলে পাটখড়ির প্রচুর ব্যবহার হয়। যেমন মাটির চুলায় রান্নার প্রধান জ্বালানী হিসেবে পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়। বসত বাড়িঘর প্রাচিন ঘিরে রাখার কাজেও পাটখড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে পাটখড়ি। পরে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বিভিন্ন দেশে পাটখড়ি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারিসহ নানা পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। এটা চলমান থাকলে পাটখড়ির চাহিদা বাড়বে, কৃষকেরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন বলে জানা তিনি।
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪