নওগাঁর বদলগাছী শিক্ষা অফিসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দের নামে প্রধান শিক্ষকদের নিকট থেকে ঘুষ আদায়সহ নিয়মবর্হিভূতভাবে ভ্যাটের টাকা জমা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে স্লিপের ভ্যাট ও আয়করসহ ১১ শতাংশ ঘুষের দুই থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। আর এ টাকাগুলো শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজিম উদ্দিন মন্ডলের কাছে জমা দিচ্ছেন। শিক্ষকরা ঘুষমুক্ত অফিস এবং হয়রানী থেকে পরিত্রান পেতে চান।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য এরমেধ্যে ১৬ টি বিদ্যালয়ে ৭০ হাজার টাকা করে, একটি বিদ্যালয়ে ৮৫ হাজার টাকা এবং ১১৭টি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৯শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ আইটির টাকা জমা নেয়া হচ্ছে। স্লিপের টাকা বিদ্যালয়ের মা ও অভিভাবক সমাবেশ, স্টেশনারি সামগ্রি ক্রয়, ভাল ফলাফলে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হবে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং সালে ফজলুর রহমান এই উপজেলায় শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি বিভিন্ন অনিয়োম-দূর্নীতি করতেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা চত্বরে শিক্ষা অফিসের দ্বিতীয় তলায় স্লিপের বরাদ্দের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভ্যাট ও আয়কর এর টাকা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। মাঝের ঘরটির দরজা বদ্ধ থাকলেও জানালা দিয়ে শিক্ষকরা অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজিম উদ্দিন মন্ডলের কাছে টাকা জমা দেন। আর জানালা দিয়ে টাকা লেনদেন করা হচ্ছে। নাজিম উদ্দিন মন্ডল টাকা নেয়ার পর একটি কাগজে বিদ্যালয়ের নাম লিখে রাখছেন। ভ্যাটের টাকার সাথে ঘুষ হিসেবে আরো দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের অভিযোগ অফিসের সবধরনের অনিয়ম নাজিম উদ্দিন মন্ডলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। স্লিপের বিপরীতে ঘুষের টাকা দিতে শিক্ষকদের একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে। কোন শিক্ষক টাকা দিতে না চাইলে বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শিক্ষকরা বলেন, স্লিপের বরাদ্দের জন্য আগে তারা চালান ফরমের মাধ্যমে স্কুলের নামে সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। কিন্তু এই শিক্ষা অফিসার এখানে যোগদানের পর তিনি সরাসরি শিক্ষা অফিসে টাকা জমা নিয়েছেন। টাকা জমা নেয়ার সময় শুধু স্কুলের নাম লিখা হচ্ছে। তবে কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে না। রশিদ পরে দিবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এছাড়া স্লিপের বরাদ্দের জন্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর ঘুষ না দিলে বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানি করে।
অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ের বরাদ্দের ভিত্তিত্বে আয়কর ও ভ্যাটসহ ১১ শতাংশ হিসেবে টাকা জমা নেয়া হয়েছে। এর বাহিরে কোন অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা অফিসারের নির্দেশেই আমি এই টাকা গুলো জমা নিয়েছি।
বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে ভ্যাট ও আইটির ১১ শতাংশ টাকা নিয়ে হিসাব শাখায় জমা দিয়েছি। এরপর শিক্ষা অফিস থেকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের বিল পাশ করা হয় এবং বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট ও আয়করসহ আরো প্রতি স্কুলের কাছ থেকে ঘুষ হিসাবে ২/৩ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে কেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভ্যাট ও আয়কর এর বাহিরে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি।
নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক ইউসুফ রেজা বলেন, শিক্ষা অফিসে ভ্যাটের টাকা সরাসরি জমা দেয়ার কোন বিধান নাই। প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভ্যাটের টাকা ট্রেজারি চালানে মাধ্যেমে ব্যাংকে জমা দিয়ে শুধু ঐ ট্রেজারি চালানের কপি শিক্ষা অফিসে জমা দিবে। এছাড়া বাড়তি টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নাই। যদি বাড়তি টাকা নেয়ার কোন অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।