• ঢাকা
  • সোমবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
দেবীদ্বারে করোনা উপস্বর্গ নিয়ে মারা যাওয়া অহিদের জানাযায় নেতার অসহযোগীতা

আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষোভ

দেবীদ্বারের করোনা উপস্বর্গ নিয়ে মারা যাওয়া অহিদের দাফনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে প্রশংসা, ক্ষোভ ও নানা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ এনে, এক ছাত্রনেতা তার ফেইজবুকের টাইম লাইনে ‘আজকের গল্প’ শিরোনামে একটি আবেগপ্রবণ ষ্ট্যাটাচ দেয়াকে কেন্দ্র করে ওই আ’লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আ’লীগ নেতা হাজী মোঃ ময়নাল হোসেন(৬৫) বলেন, সত্যকে আড়াল করে কারোর ঘাড়ে পাড়া দিয়ে উপরে উঠার সফলতায় কোন কৃতিত্ব নেই।

ছাত্রলীগ নেতা আবু কাউছার অনিক ‘আজকের গল্প’ নামে শিরোনামে প্রকাশিত আবেগের অংশবিশেষ তুলে ধরা হল। ….‘প্রতিবেশী সবার দরজা বন্ধ। ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যানকে খোঁজ করেও পাওয়া গেল না। স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা এসে তার বক্তব্য বললেন গ্রামের নির্দিষ্ট কবরে অহিদকে দাফন করা যাবে না। লাশ নিয়ে যাওয়া যাবে না তাদের স্বাভাবিক চলাচলের পথ দিয়ে। হুঁশিয়ার করেই তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন ..।

‘হ্যালো ছাত্রলীগের ওরা ৪১জন দাফন টিম’ প্রধান কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্র লীগ’র সভাপতি আবু কাউছার অনিক করোনা উপস্বর্গ নিয়ে মৃত: অহিদুর রহমানের দাফন সম্পন্ন করার পর ওই ষ্ট্যাটাচে তার ক্ষোভ থেকে তীক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। ওই ষ্ট্যাচের সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন ও পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে তুমুল ঝর উঠে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মুখমোখী হন স্বাানীয় আ’লীগ নেতা ও দেবীদ্বার বিআরডিবির চেয়ারম্যান হাজী মোঃ ময়নাল হোসেন।

বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বাদ-প্রতিবাদ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হলে, ঘটনার অনুসন্ধানে সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, এসবের মূলে ছিল ভুল বুঝাবুঝি, নেতৃত্বের অহংকার এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগের না করা।

আ’লীগ নেতা ময়নাল হোসেন দুঃখের সাথে জানান, অহিদুুরের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাকে বাড়িতে এনেই দাফনের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। ঘটনার দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেই আমি অহিদুরের দাফন সম্পন্নে আয়োজন করি। ইউএনও সাহেব আরো জানালেন, ছাত্রলীগ নেতা অনিক এর নেতৃত্বে একটি টিম দাফন সম্পন্নের কাজ করবে, তাকে সহযোগীতা করতে। আমি আমার এলাকার লোকদের সহায়তায় সমস্ত কাজ সম্পন্ন করি। আমি অসুস্থ্য এবং আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলের মৃত্যুতে আমি শোকাহত তাই আমাদের ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর উপস্থিত থাকিনি।

ওরা ৪১জন দাফন টিম’ প্রধান আবু কাউছার অনিক এর ষ্ট্যাটাচটি দেয়ার পর অনেকেই আমার ছবি সহ ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও নানা অপপ্রচার করে যাচ্ছে। যা গোটা দেশের মানুষই নয় দেশের বাহিরে থাকা লোকজনের কাছেও আমাকে হেয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’র ওরা ৪১জন দাফন টিম’ প্রধান আবু কাউছার অনিক সহ সবাই জাতির এ ক্রান্তিকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যা আমাদের জন্য খুবই গর্বের। এতে তাদের সহযোগীতা, পরামর্শদানে উৎসাহীত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তাই আমরা কবর খোড়া, কবরের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে যা প্রয়োজন, বিশেষ করে কবরের স্থান নির্ধারন, কবর খোড়া, বাঁশ কাটা, চাটাই বানানো, বাঁশের কঞ্চি কাটা কাফনের কাপড়, পলিথিন, সাবান, সেভলন সহ লাশ নিয়ে কবরে যাওয়ার পথ দেখানো সমস্ত আয়োজন প্রস্তুত রাখা হয়। এবং অনিকদের টিমকে সার্বিক সহযোগীতার জন্য ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি গ্রামের ছেলেদের নিয়ে সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এক্ষেত্রে আমার কোন ত্রæটি বা ঘাটতি ছিলনা। শুধু মাত্র ঘাটতি ছিল এটুকুই অসুস্থ্যতার জন্য আমি জানাযায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। যদি কোন সমস্যা থাকত বা কিছুর প্রয়োজন হলে অনিক আমাকে একটু ফোন করে জেনে নিতে পারত। তা না করেই আমার বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ করেছেন তিনি।

অনিক জানান, ইউএনও সাহেব আমাদের কুরুইন লাশ দাফনে পাঠান এবং দাফনের সকল আয়োজন আ’লীগ নেতা ময়নাল হোসেন করে রাখবেন। আমারা সেখানে যেয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে তেমন কোন সহযোগীতা পাইনি। তবে আমার যাওয়ার সংবাদে ছাত্রলীগ জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতা- কর্মীরা ছিলেন। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অন্ধকারে লাশ নিয়ে গোরস্তানে যেতে হয়েছে। একটি বাতিও পাইনি, টর্চের আলো দিয়ে ভাঙ্গা খানাখন্দ সড়ক দিয়ে গোরস্তানে য়েয়ে লাশ দাফন করতে হয়েছে। ময়নাল হোসেন ভাই আমাদের নেতা, অভিভাবক, ইউএনও সাহেব ওনাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ঘটনাস্থলে ওনাকে পাইনি। তিনি ফোনেও বলতে পারতেন আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি, তোমাদের কোন সমস্যা থাকলে ওয়ার্ড আ’লীগের নেতা নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রয়োজনে ওনার সাথে যোগাযোগ করো। আমরা দাফন সম্পন্ন করে ফেরার পথেই জানলাম উপস্থিত নুরুল ইসলাম ভাই ওয়ার্ড আ’লীগের নেতা এবং ওনাকে সকল দায়িত্ব দেয়া আছে।

ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, দাফন টিমের সাথে আমাদের এলাকার লোকদের নিয়ে সার্বক্ষনিক ছিলাম। জানাযায় আমাদের লোক কম ছিল কারন, নিহতের বড় ভাই বলেছেন, স্থানীয়রা কেউ থাকবেনা, কুমিল্লা থেকে লাশ আনার সময় ওখান থেকে লোকজন এসেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং চলমান নিয়ম মেনেই জানাযা সম্পন্ন করে যাবেন। পরে আবারো শোনলাম ছাত্রলীগ নেতা অনিকের টিম আসবে। এক্ষেত্রে আমাদের অন্যান্য কাজগুলোই সম্পন্ন করে রাখি। ওই দিন যারা কবর খুড়েছেন তারা হলেন, জহির, বাতেন, খোকন আলাউদ্দিন, রাসেল, আশিক, নাছির, খোরশেদ, সায়েদ আলী কবর খুড়েন, এরা সবাই কুরুইন গ্রামের অধিবাসী। কুরুইন গ্রামের আব্দুল লতিফ মাষ্টারের ছেলে মামুন জানাযার নাাজ পড়ান।
৩নং ওয়ার্ড মেম্বার জাকির হোসেন জানান, নিহত অহিদের বড় ভাই এর ঘরের সামনে লাশের গোসল সম্পন্ন করা হয়। জানাযার নামাজ পড়ানো হয় ময়নাল হোসেন’র বাড়ির মসজিদের সামনে। এছাড়া মূল সড়ক লক ডাউন করা ছিল ওটা ঠিক নয়। মূল সড়ক দিয়ে গোরস্তানে যাওয়ার কোন পথ ছিলনা। হোসেন ভাইয়ের বাড়ির পাশ দিয়েই উত্তর দিকের পুকুর পাড় বাঁশ ঝারের নিচে ছিল গোরস্তান। বাড়ির পেছনে গোরস্তান হলেও যেতে হয়েছে জড়াজির্ণ ও কাঁদা যুক্ত রাস্তা দিয়ে। বাঁশ ঝার ও একটু জমি পার হয়ে। এখানে হাটু পানি ছিল এটা সত্য না, দূর্গম রাস্তা এটাও ঠিক না। তবে গোরস্তানে যাওয়া রাস্তাটা ভালো ছিলনা, অন্ধকারে লাশ দাফনে সমস্যা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, আমাদের নেতা অনিক ভাই আসার সংবাদে আমরা ১০/১৫জন ছাত্র লীগের নেতা কর্মী বিকেল থেকেই উপস্থিত থেকে সমস্ত দাফন কার্যক্রম এগিয়ে রাখি। ঘটনাটি ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছে। আ’লীগ নেতা ময়নাল হোসেন ভাই ওয়ার্ড সভাপতিকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেও তিনি ফোনে খোঁজ নিতে পারতেন, দাফন টিম এসেছে কিনা, কোন সমস্যা আছে কিনা বা কিছু প্রয়োজন হবে কি। তাছাড়া অনিক ভাইকে ফোনে ধন্যবাদও দিতে পারতেন। অন্য দিকে অনিক ভাই এলাকায় এসে ময়নাল হোসেন ভাই উপস্থিত নাই কেন জানতে পারতেন, কোন সমস্যা হলে তাও জানাতে পারতেন। উভয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল, যার সুযোগে এ অনাকাঙ্খীত ঘটনা ঘটেছে।

এলাকার প্রবীন শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, ওনারা একই দলের লোক সমন্বয় না থাকা এবং নেতৃত্ব জাহেরী করতে যেয়ে যোগাযোগ করে কেউ ছোট হননি। এ সুযোগটা একটি দুষ্ট চক্র কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি সহ ভিত্তিহীন কথা লিখে আ’লীগ নেতা ময়নাল হোসেনকে সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি একটি বিশেষ মহলের পক্ষ থেকে উস্কে দেয়া হয়েছিল বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য গত ২মে দেবীদ্বার উপজেলার কুরুইন গ্রামের অহিদুর রহমান(৩৫) করোনা উপস্বর্গ নিয়ে কুমেক হাসপাতালে মারা যান। ওইদিন রাত ৯টায় তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুর পর পারিবারিক অসহযোগীতা এবং মৃত্যুর আগে নমুনা প্রদানে হৃদয় বিদারক ঘটনায় সাধারন মানুষের মধ্যে কঠিন রেখাপাত ও সমালোচনার ঝর উঠেছিল।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।