• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শৃঙ্খলিত শয়তান

পবিত্র রমজানে অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। কারণ, এতে শয়তান মানুষকে পাপকাজের প্রতি ধাবিত করতে পারে না। তবে মানবিক শয়তান কিংবা বাজে অভ্যাসের কারণে মানুষ মন্দকাজে লিপ্ত হতে পারে। আবু হোরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়।

জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের প্রথম রাতেই দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের প্রথম রাতেই দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কল্যাণের প্রতি আহ্বান করা হয় ও অকল্যাণ বিতাড়িত করা হয়। রমজানের প্রতি রাতেই অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
উল্লিখিত দুটি হাদিস থেকে জানা যায়, পবিত্র রমজান মাসে শয়তান শিকলে বাঁধা থাকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, রমজান মাসে শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকলে মানুষ রমজানে কীভাবে পাপ করে?

হাদিস বিশারদরা এর বেশ কিছু জবাব দিয়েছেন। এক. কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় ও মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম : ৪/৬)

আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ হলো, মানুষ পাপ করে দুই কারণে। এক. তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে। দুই. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)

দুই. আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওইসব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ নাও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি : ১০/২৭০)

তিন. রমজানের আগে কৃত পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে। একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছু দূর পর্যন্ত চলতে থাকে। ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারও কারও কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।

চার. কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)

পাঁচ. মহান আল্লাহ কোরআনের সুরা নাসে বান্দাদের মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান উভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

ছয়. কারও কারও মতে, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে। (বিস্তারিত দেখুন : শরহুন নববি আলা মুসলিম : ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ুতি আলা মুসলিম : ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি : ৪/৩২৭)

লেখক : তরুণ আলেম ও ফতওয়াবিষয়ক গবেষক। সংবাদ সুত্র ঃ দেশ রুপান্তর

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।