১০ জুলাই ২০২০
অ্যাডভোকেট শামসুদ্দীন মোল্লার ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দেশের সংবিধান প্রণেতাদেরও একজন। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি ফরিদপুরের আঞ্চলিক রাজনীতিতে তার ভূমিকা ছিল কিংবদন্তির মতো। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার সদরদী গ্রামে খ্যাতনামা রাজনীতিক শামসুদ্দীন মোল্লার জন্ম ১৯২১ সালের ২০ এপ্রিলে।
শিক্ষাজীবন: ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৪১ সালে। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এক বছর অধ্যয়নের পর শামসুদ্দীন মোল্লা কলকাতার সুরেন্দ্রমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৪৬ সালে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচয়: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শামসুদ্দীন মোল্লার পরিচয় স্কুল জীবন থেকেই। ইসলামিয়া কলেজের বেকার হোস্টেলের একই কক্ষে থাকতেন বঙ্গবন্ধু ও শামসুদ্দীন মোল্লা। একই কক্ষে থাকার সুবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়।
কর্মজীবন: শামসুদ্দীন মোল্লার ১৯৫৬ সাল থেকে ফরিদপুরে আইনব্যবসা এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
রাজনৈতিক জীবন: শামসুদ্দীন মোল্লা ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের সূচনাপর্বে একাগ্রভাবে অংশ নেন। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে মুসলিম লীগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ও তার অনুসারীদের মোহভঙ্গ হয়।১৯৪৯ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু নব গঠিত দলের যগ্ম সম্পাদক পদের দায়িত্ব পান। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শামসুদ্দীন মোল্লা দলের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য হন।
দায়িত্বপালন:
১৯৫৫-৫৮ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
১৯৬০-৭১ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৬৬-৬৮ সালে পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির সভাপতি।
১৯৬৬-৬৯ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি।
১৯৬৬-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ (এমএনএ) সদস্য নির্বাচিত।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন।
১৯৭১-৭৪ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান রচয়িতা কমিটির সদস্য।
১৯৭২-৭৫ সালে ফরিদপুর বার সমিতির সভাপতি।
১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত।
১৯৭৩ সালে ফরিদপুর আইন মহাবিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
১৯৭৪-৭৫ সালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা গভর্নর।
১৯৭২-৭৮ ফরিদপুর রেডক্রিসেন্টের সভাপতি, মূক-বধির ও এতিমখানা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, সারদা সুন্দরী কলেজ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পূর্ব খাবাসপুর ক্লাব ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশ এবং বিদেশে নেতৃত্বদান। দলের দুর্দিনের সঠিক নেতৃত্ব দানকারী প্রধান নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সকল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১ সালের ১০ই জুলাই মৃত্যবরন করেন।
লেখক: জুবায়ের জাকির ( মরহুম শামসুদ্দিন মোল্লার সেজো পুত্র)