রাজশাহীতে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। দিন দিন সমিকরণ আরও জটিল হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিন ধরেই ক্রমেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীর দু’টি পিসিআর ল্যাবে ২৬টি নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১টি এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ১৫টি নমুনায় করোনা পজিটিভ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা ১২ জন। এপর্যন্ত রাজশাহী জেলায় মোট ৯৮ জন সনাক্ত হয়েছে। আর সুস্থ হয়েছে ২৪ জন। এদিকে, গতকাল রাজশাহীতে ২জন করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সনাক্ত হওয়ার পর মৃতরা হলেন, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক লুৎফর রহমান(৫২) ও জয়পুর হাট সদর থানার সবুজনগর আমতলি গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান (৫৩)। এছাড়া, করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল রাজশাহীর করোন ইউনিটে চিকিৎসাধিন চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার জয়ন্তিপুর গ্রামের রজদুল (৬৫) নামে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে শিক্ষক লুৎফর রহমান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান। লুৎফর রহমানের বাড়ি মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল গ্রামে। তার স্ত্রী গুলনাহার বেগম মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী। সোমবার সন্ধ্যায় লুৎফর রহমানের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর সকালেই তিনি মারা যান। রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত শনিবার বাড়ি থেকেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সোমবার রাতে তার নমুনায় করোনা পজিটিভ আসে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিন রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মুস্তাফিজুর রহমান হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তিনি মারা যান। এর আগে সোমবার রামেক হাসপাতালের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজশাহী খ্রীষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে করোনা রোগী ও সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য নির্ধারিত করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রজদুল (৬৫) নামে একজন মৃত্যু বরণ করেন।
সোমবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনা সন্দেহে ৩৯নং ওয়ার্ড এ ভর্তি করান। পরবর্তীতে তাকে ঐ দিন রাত ৮টার দিকে খ্রিষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রজদুলের পূর্ব থেকেই এজমার সমস্যা ছিল এবং সে কারনেই তার মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীতে গতকাল করোনা সনাক্ত হওয়া রোগীরা হলেন-রাজশাহীর খ্রীষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকতার হোসেন (৬৬), রাজশাহী নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফায়াজ শামীম (২৬), ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হামদাদ (১০) ও হামিদুল (৫১), রাজশাহী মেডিকেল কলেজের রহিমা খাতুন (৪৪), রাজশাহীর পুঠিয়ার শাহানা (৪২), চারঘাটের উজির (১৮), আকতার বানু (৬০), মিতু (৩১), রিদওয়ান (১৪), তানোরের রাসেল (২৪) এবং কাটাখালি এলাকার তানজুয়ারা (৩৫)।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার তাদের ল্যাবে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৮৩টি নমুনার রিপোর্ট হয়েছে। এতে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের সবার বাড়ি রাজশাহী জেলা ও মহানগর এলাকায়। মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সাবেরা গুলনাহার জানান, তাদের ল্যাবে দুই শিফটে ১৮৮টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৬টি নমুনার রিপোর্ট হয়েছে। এতে ১৫টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালি এলাকায়। বাকি ১৪টি নমুনার মধ্যে ১৩টিই পাবনার। আর অবশিষ্ট আক্রান্ত একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় ৯৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৮ এবং পাবনায় ১৪৪ জন শনাক্ত হন। রাজশাহীতে ২৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ এবং পাবনায় ৮জন করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন।