• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
টিকা আগে পাব তাদেরটাই নেব- সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

বিরোধী দলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের সমালোচনার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘আমরা সমালোচনা করব কিন্তু যারা কাজ করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশকে আগে ডাকে। এমন কিছু না করা যাতে ভয়ে তাদের কাজের উৎসাহটা নষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

এটা মাথায় রাখতে হবে। ’ গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংসদ নেতা।
এর আগে সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত আছে এ অভিযোগ তুলে জিএম কাদের বলেন, ‘অনেক সরকারি বাহিনী দ্বারা নির্দোষ লোককে হত্যা করা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থে ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আসছে, মামলায় প্রমাণ হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান, চরমপন্থিদের দমন, সন্ত্রাসী দমন, ধর্মীয় উগ্রপন্থি দমনের নামে পরিচালিত কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটিত হয়। এখন রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রোষের শিকার হয়ে বন্দুকযুদ্ধ, গুমের ভিকটিম হচ্ছে। বেআইনি কাজ বন্ধ করতে প্রয়োজন আইনি ব্যবস্থা। বেআইনি কাজ বেআইনিভাবে প্রতিরোধ ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে জাতীয় পার্টির এ অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু। আমাদের বহু নেতাকর্মীর লাশ পাওয়া যায়নি। তারপর একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। কীভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করব আমরা সেই চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো কাজ করে যাচ্ছে। তারা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা করছে। সেগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। এটা খুব অস্বাভাবিক নয়, ঘটে। তবে আমরা কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা কেউ বলতে পারবেন না যে, অন্যায় করলে কাউকে আমরা ছেড়ে দিছি। সেটা কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না। ’

মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমরা অনেক মুসল্লিদের হারিয়েছি। নামাজ পড়া অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। ’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদ নির্মাণ হয়েছে এমন একটি জায়গায় যেখানে গ্যাসের লাইন ছিল। ওই গ্যাসের লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমোদন ছিল না, জায়গাটাও কমিটির ছিল না। এভাবে অনুমোদন না নিয়ে করার ফলে এই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। কতগুলো জীবন ঝরে গেল। ভবিষ্যতে কেউ যদি কোনো স্থাপনা করেন অন্তত নীতিমালা মেনে করবেন। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনায় আমাদের পড়তে না হয়। ’

করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা যাতে দিতে পারি তার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত, চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়সহ সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এজন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। আমরা টাকা-পয়সার দিকে তাকাইনি। এখানে হয়তো কেউ খুঁজে খুঁজে দুর্নীতি দেখতে পারে। যে মুহূর্তে এ ধরনের একটি দুর্যোগ মোকাবিলার চিন্তা করতে হয়েছিল তখন টাকা-পয়সা কী হবে, কত খরচ হলো, কতটুকু সিস্টেম লস তা বিবেচ্য ছিল না। আমাদের বিবেচ্য ছিল মানুষকে বাঁচানো। কীভাবে মানুষকে রক্ষা করব সেই ব্যবস্থাটা নেওয়ার চিন্তা ছিল। আর সেটা করেছি বলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। যেখানে এখনো বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মতো ঘনবসতির দেশে এই কাজগুলো করা অত্যন্ত কঠিন। উন্নত বিশ্বে এই সমস্যাটা ছিল না। ’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। অনেক দেশের কাছে আমরা শুনছি (তাদের টিকা উদ্ভাবনের কথা)। সব দেশেই আমরা আবেদন দিয়ে রেখেছি। এর জন্য টাকাও বরাদ্দ করে রেখেছি। যেখান থেকে আগে পাওয়া যায় আমরা সেটা নেব। দেশের মানুষকে করোনা থেকে মুক্ত করার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার তা নেওয়া হয়েছে। ’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেন এই দুর্যোগের সময়টা পার করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা এটা পার করতে পারব। তবে ভ্যাকসিন যেটা আবিষ্কার হলো আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম অক্সফোর্ডেরটা নিয়ে, কিন্তু তা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল অসুস্থ হয়ে পড়ল আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেছি। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। যেখানেই আবিষ্কার হোক আমাদের দেশের মানুষের জন্য তা সংগ্রহ করতে পারব। এই বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সচেতন। ’

করোনাকালে নেওয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২১টি প্যাকেজে ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি; তা জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর বাইরেও ননএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আমার বিশেষ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রতিটি মসজিদ-মাদ্রাসায় টাকা পাঠিয়েছি। সরকারের প্রণোদনার বাইরেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই আমরা এই ব্যবস্থাটা নিয়েছি। অর্থনীতির চাকাটা যাতে গতিশীল থাকে আর সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায় তার জন্য এই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি। কারণ দেশের মানুষের জন্যই আমাদের এই রাজনীতি। ’

তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান। তারপর এলো দীর্ঘমেয়াদি বন্যা। একটার পর একটা আঘাত এসেছে। আমি চেষ্টা করেছি দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়। মানুষ যেন কোনো দুর্ভোগ না পোহায়। আল্লাহর রহমতে সেটা আমরা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টা মানুষের জন্য কাজ আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। ’

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিপদ দেখে ভয়ে হতাশাগ্রস্ত যেন না হয়ে পড়ি। বিপদ আসবে। সেটা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। সেভাবে সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’

সংসদ নেতা বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো মানুষের পাশে আছি। মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা, ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য কাজে যে সকল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা ছিল তারা কাজ করেছে। আমাদের কিছুদিন থমকে যেতে হয়েছিল। সব কিছু প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল। সব কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেও সরকার বসে থাকেনি। যার কারণে আমরা রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। এখানে অবশ্য আরেকটা কারণ আছে, আমাদের খরচ কমেছে। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের বিদেশ যাওয়া নেই, বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি নেই। এসব কারণে আমাদের বেশ সাশ্রয় হয়েছে। সেটা আমরা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিন রপ্তানি একটু থমকে গেলেও আমাদের আমদানি-রপ্তানি এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে গার্মেন্টসগুলো যা চেয়েছে আমরা সেইভাবে দিয়েছি। আমাদের রপ্তানি যেন ক্যানসেল না করে যার কারণে অনেক দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমি নিজেও কথা বলেছি। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় বড় মেগা প্রজেক্টগুলো থমকে গিয়েছিল, সেগুলোর কাজ এখন চলমান। ডিজিটাল করে আমরা সরকারি কার্যক্রমগুলো সক্ষম রাখতে পেরেছি। দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ইতিমধ্যে দেশের ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ মুজিববর্ষে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পারব। এর সাথে সাথে সঞ্চালন লাইন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাসে সকলের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষার্থীদের আমরা এক হাজার করে টাকা দেব যাতে করে তাদের কাপড়-চোপড়, টিফিন বক্স তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে। ’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘কোনো সংকটের সময় পিছিয়ে থাকতে আমরা পারব না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কী হবে, কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে সেই বিষয়ে আমরা সজাগ ছিলাম। এজন্য আমরা শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত নিই, যথাযথ ব্যবস্থা নিই। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেই জন্য অনেক পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ’

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।