• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রবিবার রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া এ তথ্য নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন।

উল্লেখ্য,১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বিশেষ করে কলকাতায় ‘গোবরা নার্সিং ক্যাম্প’ স্থাপন করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদানের কথা চিরস্মরণীয়। তিনি সেই ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতাত্তোর নারী পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত মা-বোন যখন দিশাহারা, তখন বঙ্গবন্ধু নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করে তা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন তার ওপর। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭৬ সালে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন তৎকালীন সরকারকে। ১৯৮১ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার ক্ষেত্রে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাজেদা চৌধুরী ও তার স্বামী মরহুম গোলাম আকবর চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরবর্তী সময়ে দলের একাধিকবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, দলকে সুসংগঠিত করাসহ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতায় পরিণত হন তিনি।

সর্বশেষ ২০০৭ সালে দেশের রাজনীতিতে চরম সংকটময় মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বাদ দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র ১/১১ সরকার করেছিল, তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর নবম সংসদে উপনেতা নির্বাচিত হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী টানা তৃতীয়বার মহিলা সংসদ উপনেতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন।

১৯৫৬ সাল থেকে ২০২০ সাল- সুদীর্ঘ ৬৫ বছর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করেন দলের বিভিন্ন পদে। পঞ্চাশের দশকে মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হওয়া এক ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হতো, তখন ২/৪ জন নারী শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি কিংবা সমাজ সেবায় এগিয়ে আসেন তাদের অধিকার আদায়ে-সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তাদের অন্যতম। মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতা কিংবা সুফিয়া কামালদের অনুসরণ করতে করতে সমাজ সেবার পাশাপাশি রাজনীতির হাতেখড়ি সেই ১৯৫৬ সালে। একজন নারী হয়েও সাধারণ কর্মী থেকে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে, সূচনা করেন নতুন অধ্যায়ের।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এক অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে জন্য কাজ করে গেছেন। ১৯৩৫ সালের ৮ মে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণকারী এই মহীয়সী নারী দুঃসময়ে বার বার দলের হাল ধরেছেন।

বয়সের কারণে অনেক সময় রাষ্ট্রীয় বা দলীয় অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও প্রাণভরে দোয়া করতেন এদেশের জনগণ, দলীয় নেতা-কর্মী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জন্য। তিনি আজীবন দেখেছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। তাইতো তিনি প্রতিনিয়ত নিজের ছেলে মেয়েদের এই দেশের মাটি মানুষের কাছে থাকার কথা বলতেন। স্বামী ভাষা সৈনিক গোলাম আকবর চৌধুরী ছিলেন তার রাজনীতির নেপথ্য সহযোগী।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।