রাজশাহীতে নমুনা দিতে এসে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি নমুনা সংগ্রহের সময় দূরত্বের বালাই থাকে না নমুনা সংগ্রহের কাঠি ফেলে রাখা হচ্ছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাজশাহীর দুটি ল্যাবে প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা চলছে।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বিশেষ বুথে চলে নমুনা সংগ্রহের কাজ। এসব নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিদিনই অর্ধশতাধিক নমুনায় করোনা ধরা পড়ছে। কোনকোন দিন শতাধিক রোগী সনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু নমুনা দিতে যাওয়া বাকি ব্যক্তিরা পড়ছেন করোনা ঝুঁকিতে। এমনকি সুস্থ মানুষও করোনা আক্রান্তের আশংকা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, নমুনা নেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিরাপদ দূরত্ব বজাই রাখার বালাই নেই। রাজশাহীতে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে রাজশাহী নগরীতেই হাজার ছাড়িয়েছে করোনা রোগী। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের দুই ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ১৮৮টি করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এর থেকে বেশি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা দিতে আসা রোগীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নমুনা সংগ্রহকারীদেরকে। তবে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে। সচেতন না হলে হাসপাতালে আগত অন্যরাও নমুনা দিতে আসা রোগীদের সংস্পর্শে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতেন। প্রথম দিকে নমুনার সংখ্যাও ছিলো কম। তবে, করোনাভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে পরীক্ষা করানোর সংখ্যা। এছাড়া যারা নিজে গিয়ে নমুনা দিতে চান তাদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে স্থাপিত বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
নমুনা পরীক্ষার জন্য টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পর, একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয় রোগীদের। এরপর তাদেরকে ফোন করে নমুনা সংগ্রহের দিনক্ষণ বলে দেওয়া হয়। চারজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন নমুনা সংগ্রহ বুথে। প্রথম দিকে রোগীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও এখন চাপ বেড়েছে অনেক। জ্বর-সর্দি হলেই চলে আসছেন নমুনা দিতে। আবার অনেকেই কোন লক্ষন না দেখেও নিজেকে সন্দেহমুক্ত করতে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। অন্যদিকে, বাড়ি থেকে নমুনা দিলে ৫০০ টাকা এবং হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিলে ২০০ টাকা ফি নির্ধারিত হওয়ার পর বদলে গেছে চিত্র। হাসপাতালের বুথে বেড়েছে ভিড়। চাপ বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই নমুনা সংগ্রহ বুথের সামনে। অনেকটা জটলা বেধেই নমুনা দেওয়ার জন্য বুথের সামনে অবস্থান করেন। এর ফলে বুথের সামনে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে সুস্থরাও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে আগত অন্যরাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
নগরীরর হেতেম খাঁ এলাকা থেকে নমুনা দিতে আসা মো শরিফ জানান, এটা কোন সিস্টেম হলো? এখানে সবাই একজনের সাথে আরেকজন কোন দূরত্ব মানে না। করোনা না থাকলেও তো এখানে আসলে করোনা হয়ে যাবে। নগরীরর বাসার রোড় থেকে নমুনা দিতে এসেছেন নিশি। তিনি বলেন, ক্যান যে আমি এখানে মরতে আসলাম ? এখানে কোন সামাজিক দূরত্বই নেই। এর থেকে পরীক্ষা না করানোই ভালো ছিলো। সাগরপাড়া এলাকার থেকে আসা মাহফুজ বলেন, এখানে কোন কিছুই মানা হচ্ছে না। এখানে টেস্টের জন্য নমুনা নেয়ার পর কাঠিগুলো নিচে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকছে। আবার মানুষের পায়ে লেপ্টে যাচ্ছে। এগুলোই তো আমাদের করোনা পজেটিভ করতে পারে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা রোগীদের প্রতিনিয়ত সচেতন হতে বলছি। নমুনা দিতে এসে রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন।
এজন্য আমরা আগামী কাল থেকে ১৮ নং ওয়ার্ডে ডাক্তারদের জন্য এবং নার্সিং হোস্টেলের পেছনে নার্সদের নমুনা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে এক তৃতিয়াংশর বেশি সংখ্যক ভিড় কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি। রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, রাজশাহীর দুই পিসিআর ল্যাবে কিভাবে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে বা পরীক্ষা হচ্ছে সে সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। এটিতে আমাদের কিছু বলার নেই। তারপরও আপনাদের লেখনির মাধ্যমে মানুষ আরও সচেতন হবে।