• ঢাকা
  • শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব শুরু  

আরিফুল ইসলাম মহিন ,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :

পার্বত্য খাগড়াছড়ির উপজাতীয়  জনগোষ্ঠীর গঙ্গাপূজার মধ্যদিয়ে তিন দিনব্যাপী বৈসাবী উৎসবের শুরু হয়েছে।

১২ এপ্রিল ২০২১ সোমবার সকালে বড় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সৃষ্টিকর্তার  আর্শিবাদ প্রার্থনা করে চেঙ্গী নদীতে  বালির তোপ বানিয়ে জল দেবীর উদ্দেশ্যে  ফুল সাজিয়ে পুজোর   মধ্য দিয়ে আজ থেকে খাগড়াছড়ির  পানছড়িতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব।

সোমবার সকালে লোগাং, পূজগাং, চেঙ্গী, কানুনগো পাড়া, শান্তিপুর, রাবার ড্যাম এলাকায় পৃথক পৃথক ভাবে  গ্রামের তরুন তরুনীরা পুঁজা ও ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বৈসাবি উৎসবের সূচনা করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে জাঁক জমক উৎসব না হলেও প্রতিটি গ্রামের লোকজন নিজ নিজ গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে জল দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন অতিবাহিত করেন।

সরকারের নির্দেশনা ও পাহাড়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের অনুরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সকলে এই বিজু পালন করছে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের  মানুষ। প্রতিটি বাড়ীতে বাড়ীতে বৈসাবী উৎসব ঘরোয়া পরিবেশে পালন করছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ের অনেকেই।

পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎসবের এই দিনটি ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে পাহাড়ের মানুষ। কিন্তু গত বছর থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য উৎসবের আয়োজন না হলেও  বৈসাবী উৎসব পালিত হচ্ছে সীমিত পরিসরে।
সাংবাদিক  ও চাকমা কবি- সাহিত্যিক  নূতন ধন চাকমা জানান, ফুল বিঝু’র দিনে প্রতি গৃহস্থ বাড়ীর ছেলে-মেয়ে তথা বয়োবৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা খুব ভোরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফুল সংগ্রহ করে ফুলসহ(ভাতজরা ফুল) বিভিন্ন ধরনের ফুল সংগ্রহ করে গৃহে আনে। সে সব ফুলের কিছু অংশ দিয়ে নদীতে যায়। স্নান ( গোসল) করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নতুন নতুন কাপড় পরিধান করে নদীর পাড়ে বালুর স্তুপ বা নদীর পাড়ে মাটির স্তুপ করে তার উপরে কলা পাতা এবং তার উপরে ফুল দিয়ে-পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা ঘৃণা, মারামারি-হানাহানিকে বিদায় দিয়ে অনাাগত নতুন বছরের সুখ-শান্তি প্রার্থনাসহ সমস্ত হিংসা-ঘৃণা, মারামারি-হানাহানি, সমস্ত গøানি না পাওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ হয়ে “মা গঙ্গা” থেকে প্রার্থনা করে।এরপর গ্রামের বয়োবৃদ্ধদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে স্নান ( গোসল) করিয়ে আর্শীবাদ নেয়। অনেকেই আবার দল বেঁধে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ মূর্তিগুলো দুধসহ ফুলে পানি দিয়ে  স্নান করিয়ে অনাগত নতুন বছরের সুখ শান্তি প্রার্থনসহ জগতের সকল প্রাণীর প্রতি হিতসুখসহ মঙ্গল কানা করে।আগামীকাল মঙ্গলবার মূলবিজু পালিত হবে। বুধবার গোজ্যেপোজ্যে দিন পালিত হবে যার যার ঘরে।

পানছড়ি উপজেলা  চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা, উল্টাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান  বিজয় চাকমা আলাপকালে জানান, বিশ্বের করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের ন্যায় এবছরও আমরা সীমিত পরিসরে বৈসাবী উদযাপন করছি। উৎসবের প্রথম দিনে আজ গ্রামের তরুন তরুনীরা  জল দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন অতিবাহিত করছি। আগামী বছর যাতে আমরা করোনা মুক্ত একটি পৃথিবী পাওয়ার মাধ্যমে বৈসাবী উৎসব উৎসবের মতো পালন করতে পারি এ কামনা করছি।

প্রবীন রাজনীতিবিদ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বকুল চন্দ্র  চাকমা  জানান, বৈসাবীর উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এই তিনদিনে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকতো করোনা মহামারী পাহাড়ের ক্ষুদ্র  নৃ গোষ্ঠীর মানুষের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। সরকারের নির্দেশনা ও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সামাজিক দুরত্ব মেনে পালন করছে বৈসাবী উৎসব। আজ সকালে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফুল বিজু পালন করেছি। আশা করছি আগামী বছর করোনা মুক্ত একটি পৃথিবীতে বৈসাবী উৎসব আনন্দঘন ভাবে পালন করতে পারবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।