• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং
এ বছরই তিন টিকা করোনা ভাইরাসের 

ছবি প্রতিকী

করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পৃথিবীর মানুষের এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া একটাই—টিকা। এ ক্ষেত্রে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রান্তে টিকা উদ্ভাবনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার প্রাথমিক একটি ধাপ পার হলেও এর ওপর এখনো মানুষের ভরসা বা আগ্রহ জন্মায়নি বহির্বিশ্বের কয়েকটি টিকার মতো।

তথ্য খুঁজে দেখা গেছে, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটির টিকাকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনায় নিচ্ছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারের টিকায় মানুষ যেমন নজর রাখছে বেশি, তেমনি এই তিন প্রতিষ্ঠানও যতটা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে টিকা মানুষের কাছে তুলে দিতে কাজ করে চলছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরই অন্তত জরুরি ব্যবহারের জন্য হলেও জুটতে পারে এই তিন প্রতিষ্ঠানের টিকা তিনটি।
তবে এর বাইরে চীনেরও একাধিক টিকা এ বছরের মধ্যেই আসতে পারে জরুরি ব্যবহারের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) কিছুদিন আগেও চলতি বছরের মধ্যে করোনার টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানালেও গত সপ্তাহেই সংস্থাটির প্রধান বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যেই মানুষের নাগালে আসতে যাচ্ছে টিকা। এদিকে কোভেক্সের আওতায় বাংলাদেশ জনসংখ্যা অনুপাতে পাবে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য টিকা। এ জন্য ব্যয় করতে হবে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।

জানা যায়, চলতি মাসেই টিকা অনুমোদনের জন্য ফলাফল জমা দিবে ফাইজার। মডার্নার ফলাফল এফডিএর (যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন) কাছে যাচ্ছে আগামী মাসের শেষ নাগাদ। অনুমোদন পেলেই শুরু হবে জরুরি প্রয়োগ, বাজারে আসবে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। গ্রহণকারীর অসুস্থতায় আবারও গত সপ্তাহে স্থগিত হয়েছিল অক্সফোর্ডের টিকার একাংশের ট্রায়াল, যা আবার শুরু হয়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়বে না অগ্রগতিতে। অন্যদিকে অবশেষে চীন যুক্ত হয়েছে কোভেক্স গ্রুপে; এখনো বাইরে আমেরিকা।

মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়ে টিকা বাজারে না দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি উদ্ভাবক কম্পানি। এদিকে বিনিয়োগ সংগ্রহে এগিয়ে আছে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার। মডার্না ছাড়া কারো টিকাই বয়স্কদের দেওয়ার উপায় হচ্ছে না এখনো।
ফাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালবার্ড বউরলা মাত্র দুই দিন আগেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান সিএনবিসির সঙ্গে সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, আগে ধারণা করা হচ্ছিল ট্রায়াল শেষ করে আনতে আনতে হয়তো এ বছরের মধ্যে খুব একটা অগ্রগতি হবে না। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে— ট্রায়ালের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে আসায় চলতি অক্টোবরের মধ্যে এফডিএর কাছে টিকার অনুমোদনের জন্য তথ্য-উপাত্ত জমা দেওয়া যাবে। এরপর যথারীতি জরুরি প্রয়োগ এবং পর্যায়ক্রমে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে। আর মানের সংশয় কাটাতে আগে ৩০ হাজার মানুষের শরীরে এই টিকা প্রয়োগের পর আরো ১৪ হাজার মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে এরই মধ্যে।

১২০টি জায়গায় তাদের এই টিকার ট্রায়াল হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে।

ফাইজারের কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুসারে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিশ্বের বাঘা বাঘা ৯টি প্রতিষ্ঠান একজোট হয়েছে যেনতেনভাবে কোনো টিকা বাজারে না ছাড়ার জন্য। তারা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা মানুষকে উপাহার দিতে একমত হয়েছে। ফাইজারের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, বায়োটেক, গ্লাক্সোস্মিথ, জনসন অ্যান্ড জনসন, মার্ক, মডার্না, নোভাভেক্স ও সানোফি।

ফাইজারের এক বার্তায় বলা হয়েছে, এফডিএ করোনার টিকার বিষয়ে পরিষ্কার ও খুবই গ্রহণযোগ্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। সেই গাইডলাইন অনুসরণ করেই টিকা উত্পাদন ও বাজারজাত হবে। এ ক্ষেত্রে মান, নিরাপত্তা ও কার্যকারিতাই হবে একমাত্র মাপকাঠি।

এদিকে মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন বানসেল গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মা ও বায়োটেকবিষয়ক এক সম্মেলনে বলেছেন, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মডার্নার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফল জমা দেওয়া হবে এফডিএর কাছে। তবে অনুমোদন পেলেই বাজারে ছাড়া হবে না, কেবল জরুরি ব্যবহারের জন্য কিছু টিকা দেওয়া হবে। আর এই টিকার বায়োলজিক্যাল (বিএলএ) অনুমোদনের জন্য জানুয়ারিতে জমা দেওয়া হবে। সেই অনুমোদন পাওয়া গেলে মার্চের মধ্যে বাজারে যাবে মডার্নার টিকা। দুই ডোজের এই টিকা ৫৬ বছরের ওপরের মানুষের শরীরেও প্রয়োগ করার উপযোগী করা হয়েছে।

এর  মধ্যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য কিছুটা হলেও সুখবর নিয়ে এসেছে চীন। মাত্র এক দিন আগে ডাব্লিউএইচও, গ্যাভি ও সিইপিআইর সমন্বয়ে গঠিত কোভেক্স জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশটি। ফলে তাদের কোনো টিকা সফল হলে এবং এফডিএ অনুমোদন পেলে তা থেকে নির্দিষ্টহারে কোভেক্সে দিতে হবে। কোভেক্স থেকে আবার বিভিন্ন হারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশও কোভেক্স থেকে টিকা পাবে। এখন পর্যন্ত আমেরিকা কোভেক্সের ছাতার নিচে আসেনি। ফলে আমেরিকার টিকা সফল হলেও তা কোভেক্সে পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে আগ্রহী দেশগুলো থেকে নিজ নিজ টিকার জন্য আগাম বিনিয়োগ বা তহবিল সংগ্রহে শুরু থেকে তত্পর ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ সংগ্রহে ওপরের সারিতেও রয়েছে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার।

ফাইজারের তথ্য সূত্র অনুসারে, গত জুলাইতে প্রতিষ্ঠানটি ১০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উত্পাদন বা বিপণনের জন্য ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের টার্গেট নেয়। এখন পর্যন্ত এ বাবদ উঠেছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফাইজার এফডিএর পাশাপাশি ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সির কাছেও ইউরোপে এই টিকার উৎপাদন ও বাজারজাতের অনুমতি চেয়েছে।

বাংলাদেশ এই টিকা পাওয়ার জন্য একদিকে যেমন কোভেক্সে যুক্ত হয়েছে, অন্যদিকে যেসব দেশের প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছে সেসব দেশের সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে, যাতে করে সফল টিকার খোঁজ পাওয়া গেলেই তা দেশে আনা সহজ হয়। এ ছাড়া প্রাইভেট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও বিদেশের কয়েকটি কম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি ও যোগাযোগ করেছে। এ ক্ষেত্রে চীন, ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে; আবার প্রাইভেটভাবে মডার্না, ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোভ্যাকের মতো কম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে টিকা কেনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে প্রাথমিকভাবে। অন্যদিকে চীনের সিনোভ্যাকের টিকার বাংলাদেশে ট্রায়ালের বিষয়টি ঝুলে থাকলেও ভারত বায়োটেক ও সানোফির টিকার ট্রায়ালের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক প্রাণীর শরীরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্যের দাবি করে এখন তারা মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য বিএমআরসি ও সরকারের কাছে আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কোভেক্স থেকে কী পরিমাণ টিকা বাংলাদেশ পেতে পারে এবং সে জন্য কী পরিমাণ টাকা লাগবে, তা হিসাব করে রেখেছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ইপিআই) ডা. শামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোভেক্সের শর্ত ও নীতিমালা অনুসারে আমরা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা তাদের কাছ থেকে পাব। সেই হিসাবে আমরা তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য টিকা পাব। দুই ডোজের টিকা হলে মোট টিকা লাগবে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ। কোভেক্সের নির্ধারিত দাম অনুসারে প্রতি ডোজ টিকার জন্য দিতে হবে ১ দশমিক ৬ ডলার থেকে দুই ডলার পর্যন্ত। এই হিসাবে আমরা প্রতি ডোজ টিকার দাম বাবদ দুই ডলার ধরেছি। দুই ডোজের জন্য জনপ্রতি ধরা হয়েছে চার ডলার। এর সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিজনকে টিকা প্রয়োগে ধরা হয়েছে দুই ডলার। প্রাথমিকভাবে সব মিলিয়ে ধরা হয়েছে ছয় ডলার।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

নভেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« অক্টোবর    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।