• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
ফরিদপুরের প্রখ্যাত ধাত্রী সুশীলা মাসি-প্রফেসর আনম আবদুস সোবহান

ফরিদপুরের প্রখ্যাত ধাত্রী সুশীলা মাসি- প্রফেসর আনম আবদুস সোবহান

প্রথম তাঁকে কবে দেখি মনে নেই। সেকালে সন্তান জন্মের আধুনিক ব্যবস্থা অর্থাৎ ক্লিনিক, হাসপাতাল, নার্সিং হোম,মাতৃসদন ইত্যাদি ছিল না। নারী ধাত্রীদের হাতে বা সাধারণ কোনো নারীর হাতে সন্তান ভূমিষ্ট হত। প্রতি বছর বহু নারীর প্রাণহানী হত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। অধিক সন্তান জন্মদিতে হত একজন নারীকে।

আধুনিক জন্ম নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা ছিল না। অধিকন্তু জন্ম নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বিষয়ে ধ্যান ধারণা সমাজে অল্পই ছিল। নারীর স্বাস্থ বিষয়ে সচেতনতা পুরুষদের মধ্যে অল্পই ছিল। সাধারণ ভাবে হেলা ফেলার মধ্য দিয়ে মানব শিশু আলোর মুখ দেখত।এই হেন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে প্রতিভার আবির্ভাব হয়েছে। আজকের জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সমাজে বিদ্যমান থাকলে শ্রীকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ সহ আমাদের অনেকেরই এই পৃথিবীতে আগমন হত কি না,কে জানে?

এমনি অনগ্রসর সমাজে ফরিদপুরে দীর্ঘ দিন যে ধাত্রী নারীদের সন্তান ভূমিষ্টে সাহায্য করেছেন, যার হাতে বহু সন্তানের আগমন হয়েছে মায়েদের কোলে তিনি এই সুশীলা মাসী। তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসকের চেয়ে অভিজ্ঞ ধাত্রী বিদ্যায়।
আমার মার তের সন্তান । এই তের সন্তানের মধ্যে আট সন্তান আজও বেঁচে আছি । অন্যান্য পাঁচ ভাইবোন শিশু অবস্থায় মারা যায়। আমার প্রথম ভাই ভূমিষ্ট হবার পর অল্পকিছুদিন বেঁচে ছিলেন। এই ভাইয়ের নাম রাখা হয়েছিল তারা মিয়া। ভালো নাম রাখার সুযোগ দিয়েই ভাইটি স্বর্গে ফিরে যায় আমার মার কোলকে খালি করে।

আমার এই ভাইটির জন্ম হয়েছিল কোতোয়ালি থানার উত্তরে আব্বার প্রথম বাসভবনে। ধাত্রী কে ছিল আমি জানি না। আমার জন্মও এই একই বাড়িতে। আমার সময় ধাত্রী কে ছিল কোনদিন শোনা হয়নি। যখন জানার আগ্রহ হল তখন বলার কেউ নেই। এখানে মার তৃতীয় সন্তান শামসুন্নাহার জন্ম গ্রহণ করে।কে ছিলেন ধাত্রী আমি জানিনা। এই বোনটি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। আকস্মিক জ্বর হলে ডা জিতেন্দ্রনাথ ইঞ্জেকশন দেন। অমনি মার কোলের ওপর আমার বোনটি মারা যায়৷ সারা জীবন আমার মা এই বোনটির কথা বলে গেছেন। কোনদিন মা সামসুন্নারকে ভুলতে পারেননি। এর একটি কারণ তার মোটামুটি বয়স ও করুণ মৃত্যু। এরপরের বোন হোসনেয়ারা লিলির জন্ম মকসুদপুরের ট্যাংরা খোলা আমার নানা বাড়িতে। ১৯৫১ সালে আমরা ঝিলটুলিতে আসিএখানে আমার অন্যান্য নয় ভাইবোনের জন্ম। এই বাড়ীতে আসার পর সুশীলা নার্সকে প্রথম দেখি। এরপর একাধিক বার তিনি এসেছেন।

কলেজে পড়ার সময় সাংবাদিতা সহ নানা কাজে যুক্ত থাকায় এই ছোট্ট শহরের অনেকের সঙ্গে চেনা জানা হয়। এ সময় খৃষ্টান মিশন হাউজে অনেকবার গিয়েছি সুশীলা মাসীর কাছে। পরিচয় হয়েছিল তাঁর ছেলে ডেভিড দিলীপ দার সঙ্গে। পরিচয় হয়েছিল সুশীলা মাসীর বোন সুনীলা মাসীর সঙ্গে। পরে তিনি বাংলায় এম এ পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নেন। এ কারণে আমার বাসায় একাধিকবার আসেন। তিনি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

ফরিদপুরে আর একজন স্বনাম ধন্য ধাত্রী মায়া নার্স নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মতিয়র রহমান মোক্তারের স্ত্রী ছিলেন।একবার তাঁকে বাসায় আনা হয়েছিল।তিনি আমাদের আপনজনদের একজন।
এখানে একটি কথা জানাতে চাই , এই মায়া খালাকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন বনস্পতি ছদ্মনামে এক লেখক।উপন্যাসের নাম লজ্জাবতী মেয়ে।মতিয়র রহমান আর মায়ার কাহিনী এই উপন্যাসের প্রতিপাদ্য বিষয়। এই বিয়ের সাক্ষ্মী সোবহান মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করেও আমি লেখকের মূল নাম জানতে পারিনি। ফরিদপুর শহরের আর একজন ধাত্রী হলেন সদর হাসপাতালের তাজের মা। এই ধাত্রীরাই ছিল সে সময়ের নারী বান্ধব।

আধুনিক চিকিৎসার উন্নতির সংগে এই ধাত্রী পেশা মনে হয় বিলুপ্ত।এই ধাত্রী পেশা এখন ইতিহাস। গ্রামে আছে কি না আমার জানা নেই।এই ধাত্রীদেরই গ্রামে দাই মা বলা হত।
চর্মকারদের পরিবার থেকে এক শ্রেণীর নারী এসে সন্তানের মার পরিচর্যা করত। এরা কি কাজ করত লিখতে গিয়ে দেখলাম জানা নেই।
সময়ের সঙ্গে অনেক পেশাই বিলুপ্ত হয়ে যায়।

## প্রফেসর আনম আবদুস সোবহান, কবি,গল্পকার ও গবেষক।। 

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।