• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
ইমাম নিয়ে মতভেদ, ১ টি ঈদগাহ ভেঙে ২ টি

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের পারশাইলকাঠি গ্রামে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায়, আজ থেকে ৩২ বছর পুর্বে আকবর আলী মন্ডল নামে এলাকার এক বিত্তশালী ব্যাক্তি ঈদগাহ করার জন্য তার জমি থেকে ১২ শতাংশ জমি ওয়াকফ করেন এবং তারপর থেকে ঐ জায়গায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু বিগত কয়েকবছর যাবৎ ঈদের নামাজের ইমাম নির্বাচন নিয়ে মতভেদ তৈরী হওয়ায় গ্রামে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। যার ফলে গত ৭ মে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানে আঃ রাজ্জাক মিয়ার উপস্থিতিতে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে আরেকটি ঈদগাহ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পুর্বের ঈদগাহটি ভেঙে সেখান থেকে ইট উঠিয়ে, মাটি কেটে নিয়ে ২০/৩০ গজ দুরে নতুন করে আরেকটি ঈদগাহ তৈরী করা হচ্ছে এবং নতুন এ ঈদগাহে গ্রামের প্রায় সকলেই কাজে অংশ নিয়েছে।
এ বিষয়ে মৃত আকবর আলী মন্ডলের পুত্র ওহিদ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ থেকে ৩২ বছর আগে আমার বাবা এই জমি ঈদগাহের জন্য ওয়াকফ করেন। তখন থেকে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার বাবা এই ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ছিলেন, তার ইন্তেকালের পর থেকে আমি দীর্ঘদিন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কয়েকবছর পুর্বে বর্তমান ইমাম সুলতানপুর ইউনিয়ন ইমাম কমিটির সভাপতি, চর শ্যামনগর দাখিল মাদ্রাসার আরবী বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক মওলানা আঃ করিম মন্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি তিনি সূদের ব্যবসা করেন এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শামসুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নিকট হতে দুই লক্ষ টাকা নেন। এছাড়া তিনি ঈদগাহের কয়েকটি গাছ বিক্রি করেছেন যার হিসেব তিনি এখনও দিতে পারেননি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ঈদগাহের নামে টাকা তুলে সেগুলো আত্মসাৎ করেছে। এসকল কারণে আমরা কমিটির লোকজন তাকে ইমাম হিসেবে না রাখার সিদ্ধান্ত নিই কিন্তু গ্রামের লোকজন তা মানতে নারাজ হওয়ায় আমরা কমিটি ভেঙে দিই এবং নতুন কমিটি হয়। নতুন এই কমিটির নেতৃত্বে এখন ৩২ বছরের পুরাতন ঈদগাহ ভেঙে তারা নতুন ঈদগাহ তৈরী করছে। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি সূদের ব্যবসা করে অন্যের টাকা মেরে খায় তার পিছনে আমরা নামাজে দাড়াবো না। আর এ কারনেই আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।
এ বিষয়ে কথা হয় ইমাম আঃ করিম মন্ডলের সাথে, তার কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। চাকরির কথা বলে যে দুইলক্ষ টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিষয়টি আসলে তা নয়, আমি মধ্যস্ততা করে শামসুল ইসলামকে চাকরি পাইয়ে দেবার চেষ্টা করি এতে ৫০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শামসুল ইসলামের পিতা সোহরাব শেখ লিখিত দিয়েছেন যে আঃ করিম মন্ডল কোন টাকা নেননি। এছাড়া আমি কোন গাছ কেটেও বিক্রি করিনি।
অভিযোগ পেয়ে রাজবাড়ী সদর থানার এস আই আতাউর রহমান ঘটনা স্থলে এসে মাটি কাটা বন্ধ করে দেন এবং বলেন শালিসে যেহেতু শুধু ইট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে আপনারা শুধু ইট নিয়ে যাবেন, কোন মাটি নিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ রাজ্জাক মিয়া বলেন, ইমাম নিয়ে এই সমস্যা বেশ কয়েকবছর যাবৎ হচ্ছিল কিন্তু এবার তা ভয়ংকর রুপ ধারণ করে যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে বৃহস্পতিবার আমি, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রামের বয়স্কদের উপস্থিতিতে শালিস হয়। গ্রামের বেশিরভাগ লোকজনই পুরাতন ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে রাজি না হওয়ায় বলি তোমাদের সমস্যা হলে নিজেরা নতুন একটি ঈদগাহ তৈরী করে নাও। তখন ঈদগাহে তারা যে টাকা পয়সা দিয়েছে সেটা নিয়ে কথা হয় তখন বলি তোমরা ইটগুলো নিয়ে যেতে পারো কিন্তু তারা শালিসের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইট ছাড়াও মাটি কেটে নিচ্ছে এমনকি মিনারটিও ভেঙে ফেলছে। তাছাড়া মাওলানা আঃ করিম মন্ডল সম্পর্কে অনেকের টাকা আত্মসাৎ করার কথাও শুনেছি। দুই লক্ষ টাকার অভিযোগের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন করিম মন্ডলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ইউনিয়নে আছে।
সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, যে বিষয় নিয়ে দন্দ্ব তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিগত কয়েকবছর যাবৎ এ সমস্যা চলে আসছে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ইমাম সাহেবকে নিয়ে শুধু ওহিদ মন্ডল ও তার ভাই এবং তার পরিবারের লোকজনের সমস্যা। পুরো গ্রামবাসী একদিকে আর ওহিদ মন্ডল ও তার পরিবারের লোকজন একদিকে। ইমাম সাহেবকে ভাল মানুষ হিসেবে আমরা জানি, সে যদি কোন অন্যায় করে তাহলে তার জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে আমরা কেন ঝামেলা করতে যাবো? যার ভাল লাগবে না সে অন্য জায়গায় গিয়ে নামাজ পড়ুক। তবে ঈদগাহ ভাঙা মোটেও ভাল কাজ হয়নি। নতুন ঈদগাহ করতে সমস্যা নেই কিন্তু পুরাতনটা ভেঙে নয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মার্চ ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« ফেব্রুয়ারি    
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।